ভুল নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আরও গভীর সংকটে আওয়ামী লীগ
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭
বিদেশে পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে সাম্প্রতিক সময়ে চোরাগোপ্তা হামলা, আগুন সন্ত্রাস ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনার জেরে ধ্বংসস্তূপে থাকা আওয়ামী লীগ আরও গভীর সংকটে পড়ছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন—ভুল নেতৃত্ব এবং হটকারী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
জেন-জিদের সরকারবিরোধী জুলাই আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানির পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। জনরোষের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ভারতে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার পরিবারের সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের বড় অংশ বিদেশে চলে যায়। দলটি ফ্যাসিস্ট শাসনের দায়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
দেশে থাকা বহু নেতাকর্মী জেল-হাজতে বা আত্মগোপনে থাকলেও বিদেশে থাকা শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়মিত ভিডিও বার্তায় কর্মীদের রাস্তায় নামতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এর ফলে আবেগে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন
-
রায়ের প্রতিবাদ করা তাদের অধিকার, কিন্তু হুমকি দিয়ে রাজনীতিতে ফেরা সম্ভব নয়।
-
অতীতের ভুল স্বীকার না করলে সাংগঠনিক পুনর্গঠনও অসম্ভব।
-
বর্তমান পথ অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের ‘কামব্যাক’-এর সম্ভাবনাই নষ্ট হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন
-
পতনের পর ১৫ মাসেও দল কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে পারেনি।
-
নির্বাচনে কীভাবে ফিরবে বা নিষেধাজ্ঞা কবে উঠবে—কেউ জানে না।
-
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা তাদের আরও আতঙ্কিত করছে।
-
সহিংসতার নির্দেশ পেলে তা হবে "আত্মঘাতী"—অনেকেই দল ছেড়ে দিতে পারেন।
নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার কিছু বক্তব্য যেমন
“কেউ আঘাত করলে পালটা আঘাত করতে হবে”,
“তুমি যেখানে আছো, তুমিই নেতা”,
“মাঠে নামো, সরকারের পতন ঘটাতে হবে”
—এসব উসকানিমূলক বক্তব্য সাধারণ কর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
ফেসবুক লাইভে তার একটি বক্তব্যের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুর-হামলা হয়েছিল। ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির নির্দেশেও ব্যাপক সহিংসতা, আগুন এবং গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
ফলাফল:
-
বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণের দায় পড়ছে আওয়ামী লীগের ওপরই
-
‘অগ্নিসন্ত্রাসী’ তকমা এখন তাদের গায়েই লেগে যাচ্ছে
-
দেশে বসে দীর্ঘদিন এমন রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে না
এরপরও ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, বিক্ষোভ, প্রতিরোধসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করছে নিষিদ্ধ দলটি।
উত্তরাঞ্চলের এক সিনিয়র ত্যাগী নেতা বলেন
“সারাজীবন দলের জন্য সংগ্রাম করেছি। আজ সেই দল হটকারী সিদ্ধান্তে ধ্বংসের মুখে। এখন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্মসূচি আমাদের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনছে।”
তার মতে,
ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরা ছাড়া দলের সামনে আর কোনো পথ নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র নেতাদের মতে
-
দলকে ‘রিফাইন্ড’ করে ফিরে আসতে হবে
-
গ্রহণযোগ্য নেতাদের সামনে আনা উচিত
-
সহিংস পথ পরিত্যাগ করা ছাড়া বিকল্প নেই
-
অতীতের ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট ক্ষমা চাইতে হবো
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।