বৃহঃস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে বাড়ছে উত্তেজনা

Mithu Murad | প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৫

ছবি: সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যাবে— তা নিয়ে দুই দেশেই বাড়ছে উদ্বেগ ও আলোচনা।

আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’ দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি না— রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে এখন এই প্রশ্নই মুখ্য।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যায়। এই পটভূমিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন রায় দুই দেশের সম্পর্কে আরও অস্থিরতা তৈরি করেছে।

রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি ও রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান ভারতে অবস্থান করছেন, আর মামুন কারাগারে আছেন।

রায় ঘোষণার পরপরই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনকে হস্তান্তরের আহ্বান জানায়।

তবে ভারত এখনো প্রত্যর্পণ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান— “বিশেষ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে সাময়িক নিরাপত্তা বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।”

ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত জানান, প্রত্যর্পণ একটি অত্যন্ত জটিল ইস্যু, এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ‘মৃত্যু হুমকি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

তার মতে, “বাংলাদেশের আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় থাকায় শেখ হাসিনার হস্তান্তর ভারত সহজে করবে— এমন সম্ভাবনা কম।”

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করেছে। পর্যটন ভিসা বন্ধ এবং মেডিকেল ভিসাও পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলের ভারতবিরোধী বক্তব্য দিল্লিকে আরও সতর্ক করেছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও সম্পর্ককে জটিল করেছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ রয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাঝে।

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা নতুন সরকারই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতি নির্ধারণ করবে— মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “নতুন সরকারের ধরন, ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ইচ্ছা, এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সক্রিয়তা— এই তিনটি বিষয়ই নির্ধারক হবে।”

তার মতে, চাইলে উভয় দেশ শেখ হাসিনা ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ নিতে পারে, আবার চাইলে এই ইস্যু চাপের কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

অন্যদিকে, শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন— নতুন সরকারও সম্ভবত প্রত্যর্পণের অনুরোধ করবে, তবে “এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক আটকে থাকলে দুই দেশের জন্যই তা অকল্যাণকর।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top