বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কিডনি উৎসর্গ করেও সন্তানকে বাঁচাতে পারলেন না মা

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:১৩

সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান নায়েব মন্ডল (নায়েব আলী) আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি বিকলজনিত জটিলতায় ভুগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স ছিল মাত্র ত্রিশের কোঠায়।

নায়েব মন্ডল লেখাপড়া শেষ করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি শুরু করেছিলেন। পরিবারের স্বপ্ন ছিল শিগগিরই তার সংসার জীবন শুরু হবে। বিয়ের কথাবার্তাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। এমন সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে জানা যায়, তার দুটি কিডনিই সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে গেছে।

প্রথমদিকে বিষয়টি পরিবারকে না জানালেও গুরুতর অবস্থার পর তা আর গোপন রাখা সম্ভব হয়নি। দরিদ্র সংসার হলেও বাবা-মা ছেলের চিকিৎসায় কোনো কমতি রাখেননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালেও নেওয়া হয়।

সবচেয়ে আলোড়ন তোলে নায়েবের মায়ের আত্মত্যাগ। সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে তিনি নিজের একটি কিডনি দান করেন। গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডিইউ হাসপাতালে সফলভাবে সম্পন্ন হয় কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার। পরিবার নতুন আশায় বুক বাঁধে, এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মায়ের এই মহৎ আত্মত্যাগের প্রশংসা।

অস্ত্রোপচারের পর কয়েক সপ্তাহ নায়েব মন্ডলের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও কিছুদিন পর আবার জটিলতা দেখা দেয়। ক্রমেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

নায়েবের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোক। যে মা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেই সন্তানকেই এখন তাকে বিদায় নিতে হলো চিরতরে। শোকাহত মায়ের বুক ভেঙে কান্না যেন থামছেই না।

এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। গ্রামের অনেকেই বলেন, নায়েবকে তারা হয়তো কাছ থেকে দেখেননি, কিন্তু তার সংগ্রাম, মায়ের আত্মত্যাগ এবং এমন পরিণতি—সবকিছুই মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে গেছে।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top