নির্বাচনের আগে এনসিপিতে ভাঙনের সুর স্পষ্ট

ভাঙনের মুখে এনসিপি: জোট, আদর্শ আর বিদায়ের রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৯

সংগৃহীত

ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই গভীর হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপির সংকট। যে দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, সেই জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি এখন জোট, সমঝোতা আর পদত্যাগের ঘূর্ণিপাকে।

ভোটের ঠিক আগমুহূর্তে এনসিপি ছাড়লেন দলের পরিচিত মুখ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। তিনি শুধু পদত্যাগই করেননি, ঢাকা–৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা স্পষ্ট বলেছেন—দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব, আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে আসা এবং সমঝোতার রাজনীতিতে ভিন্নমতকে গুরুত্ব না দেওয়াই তার সরে দাঁড়ানোর প্রধান কারণ।

তাসনিম জারার পদত্যাগের পেছনে বড় কারণ—জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতা। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এনসিপির অন্তত ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতা দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে—জামায়াতের সঙ্গে জোট এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই অভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক। এনসিপির একাংশ বলছে—বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় টিকে থাকার জন্য কৌশলগত সমঝোতা জরুরি। অন্য অংশের যুক্তি— কৌশলের নামে আদর্শ বিসর্জন দিলে নতুন রাজনীতির স্বপ্নই ভেঙে পড়বে। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই এক এক করে দল ছাড়ছেন নেতারা।

তাসনিম জারার আগেই পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মীর আরশাদুল হক। সাম্প্রতিক সময়ে দল ছেড়েছেন তাজনূভা জাবীনসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ মাসের মাথায় এনসিপি দাঁড়িয়ে গেছে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে।

তাসনিম জারা জানিয়েছেন— তিনি কোনো দল বা জোটের হয়ে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা–৯ আসনে ভোট করবেন। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি যা–ই হোক, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য আমি লড়াই চালিয়ে যাব।

তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—জোট কি এনসিপিকে ক্ষমতার পথে নেবে, নাকি আদর্শ হারিয়ে দলটিকে আরও ভাঙনের দিকে ঠেলে দেবে? জুলাই অভ্যুত্থানের রাজনীতি কি এই পথেই শেষ হবে? সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ মাসের মাথায় তরুণদের এই রাজনৈতিক দলটি এখন স্পষ্ট ভাঙনের মুখে। নির্বাচনের আগে এই ভাঙন এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কোন পথে নিয়ে যাবে—সেটাই এখন বড় আলোচনার বিষয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top