বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ৮৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৭

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন। নিহতদের মধ্যে সাত নারী ও দুই শিশু রয়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

আল-আহলি স্টেডিয়াম ইতোমধ্যেই গাজার বহু বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। সেখানে রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন অনেকে। গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা নাজওয়া নামের এক নারী বলেন “হাতে যা ছিল তাই নিয়ে বেরিয়েছি। আমাদের কিছুই বাকি নেই। আমরা আতঙ্কে আছি। যাতায়াতও ব্যয়বহুল, জিনিসপত্র আনার সামর্থ্য নেই।”

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে ভয় সৃষ্টি করছে এবং হাজারো মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশন অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলের কার্যক্রম আসলে গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার কৌশল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, আরও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

জাতিসংঘে তীব্র সমালোচন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গাজার যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনা হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন: “যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, তারা মানবতার যোগ্য নয়।”

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ: “আমরা গাজার জনগণের সঙ্গে আছি। এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।”

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে জানান, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নীরব আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। জুলাইয়ে ১৪২টি দেশ সমর্থন করা “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা” ভিত্তি করে এই উদ্যোগ চলছে।

অন্যদিকে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ওয়াশিংটন “আশাবাদী, এমনকি আত্মবিশ্বাসী” যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই বিশ্বনেতাদের হাতে পৌঁছে গেছে।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর আগের শান্তি প্রচেষ্টা বারবার ব্যাহত করেছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন, যারা ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

এর আগে গত ১৮ মার্চ নেতানিয়াহু একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেন এবং পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপ করেন। এতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং বহু মানুষ না খেয়ে মারা যান। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top