• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **


সূত্র বলছে, যুদ্ধবিরতি অসম্ভব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর, এরপর কী?

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৭:১৬

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক, দুই পক্ষের হাজারো সৈনিক নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে যুদ্ধ ঘিরে মস্কো আর পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগের পারদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন। যুদ্ধের বছরপূর্তির প্রাক্কালে পুতিন সেই নির্দেশের সমর্থনে কথা বলছেন। অন্যদিকে, শক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

পুতিন যখন জাতীয় ভাষণে জ্বালাময়ী কথা বলছেন, ঠিক তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি খেরসনে রাশিয়ার হামলার শোকে বিলাপ করছেন। এই হামলায় ছয়জন নিহত হন। হামলার পরের একটি ছবিতে বাদামি চুলের এক নারীর নিথর দেহ পথের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গোটা বিশ্ব যে যুদ্ধের ভয় করছিল, শুক্রবার সেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, শান্তির গন্তব্য বহু দূরে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেবে? আল-জাজিরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মত নিয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন কারো পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই

জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসবিদ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, ‘মৌলিক দৃশ্যকল্প— রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন কোনো দেশই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। রাশিয়ার গোটা দনবাস দখলের সক্ষমতা নেই বললেই চলে। দেশটি জাতি হিসেবে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেবে।’

‘ইউক্রেন ২০১৪ সালের জানুয়ারির (ক্রিমিয়ার অধিভুক্তি এবং দনবাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রুশ সমর্থনের আগে) সেই সীমান্ত আর ফিরে পাবে না।’

‘২০২৩ সালের শেষে কিংবা ২০২৪ সালে এই যুদ্ধ শেষ হতে পারে। কারণ দুই দেশই তাদের রসদ ফুরিয়ে ফেলবে। প্রধান কারণ হলো, ইউক্রেন ও রাশিয়া যা অর্জন করতে চাইছে, তার জন্য দুই পক্ষের কারো কাছেই পর্যাপ্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ কিংবা জনবল নেই।’

আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াকে দুর্বল করে দিতে ইউক্রেনের জয় আসা উচিত

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান ইহর রোমানেঙ্কো বলেন, ‘জানুয়ারির শেষদিক থেকে রাশিয়ান বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে। খারকিভের কিপিয়ানস্ক থেকে দীর্ঘ একটি যুদ্ধক্ষেত্র রয়েছে। পাঁচ দিক- কুপিয়ানস্ক, লেম্যান, বাখমুত, আদভিভকা ও শাখতার থেকে ভুহলেদার পর্যন্ত সমস্ত পথ, হাজার কিলোমিটারের বেশি হবে।’

‘শত্রুরা কৌশলগত পর্যায়ের পদক্ষেপ ছাপিয়ে গেল বছরের শেষ থেকে জড়ো করা সামরিক মজুত ব্যবহার করছে। রাশিয়া অভিযানের জন্য জনবল প্রস্তুত করেছে। গেল সেপ্টেম্বর থেকে সমাবেশের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তিন লাখ লোক এই অভিযানে যুক্ত করবে।’

‘ওয়াগনারের (বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান) মাধ্যমে রাশিয়া বন্দিদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই যুদ্ধে মারা পড়ছে এবং ওয়াগনার পরাস্ত হচ্ছে।’

‘মস্কো দেড় থেকে দুই লাখ লোককে কৌশলগত ব্যবহারের উদ্দেশে রুশ-বেলারুশ শুটিং সীমায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং তাদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে।’

‘ইউক্রেনের বাহিনী পূর্বে, বিশেষ করে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে প্রতিরক্ষামূলক অভিযান পরিচালনা করছে এবং পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় সৈন্য ও সরঞ্জামের মতো নিজেদের কৌশলগত মজুত প্রস্তুত করছে।’

‘এই প্রস্তুতির বেশিরভাগই বিদেশে হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ সরঞ্জামই বিদেশি। তবে একচেটিয়াভাবে নয়, কারণ বেশ কিছু সরঞ্জাম যেমন ট্যাংক, অস্ত্রধারী যান– সোভিয়েতের তৈরি। এগুলো আমরা আরও দ্রুত চালানো শেখাতে পারি।’

‘আমাদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল যুদ্ধবিমানের বিষয়ে, যা সামরিক সহায়তার নতুন একটি পদক্ষেপ। এটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা হয়নি, তবে এটি পরিষ্কার করা উচিত ছিল। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পোল্যান্ড সফর শেষে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।’

‘২০২২ সালে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ২০১৪-২০১৫ এর মতো ছিল না। ওই সময়ে যে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছিল, এর সঙ্গে ন্যাটোর মানদণ্ডের মিশেলে রূপান্তর ও উন্নতির দীর্ঘ পথের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে।’

‘যদি যুদ্ধের শুরুর সময়ে আমাদের শত্রুপক্ষের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আমাদের তিনগুণ হয়, তবে এখন পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনেক কম। তবে কিছুটা হলেও রয়েছে।’

‘যুদ্ধের পরিণতিতে জয় এই কারণে আসা দরকার যাতে, আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়াকে দুর্বল করে দেওয়া যায় এবং দেশটি যাতে এরকম যুদ্ধে না জড়াতে পারে।’

মনে হয় যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে

লন্ডনের কিংস কলেজের রুশ রাজনীতির অধ্যাপক গুলনাজ শরাফুতদিনোভা বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে থাকা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি সামরিক বিপর্যয় স্বত্বেও এখনো পুতিনের অবস্থান সুদৃঢ়।’

‘বিভিন্ন অভিজাত গোষ্ঠী হয়তো সামরিক ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব ও কার্যক্রম বাড়িয়ে পুতিনের পেছনে এক হয়েছে।’

‘অনেক অভিজাত গোষ্ঠী হয়তো যুদ্ধের সমালোচনা করে। তবে তারা প্রতিশোধের ভয়ের পাশাপাশি পুতিনের সঙ্গে লেগে থাকার কৌশলের অংশ হিসেবে সচেতনভাবেই রাশিয়ার জয় চায়।’

‘নিষেধাজ্ঞায় ঠিকঠাকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে না পারা নিঃসন্দেহে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর উৎপাদন ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। কিছু কিছু যন্ত্রাংশ পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে খোঁজা হলেও পুরোপুরি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না।’

‘অর্থনীতির ক্ষেত্রে, যদিও বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি রাশিয়ার সরকার মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা বেশ ভালোভাবে দেখিয়েছে, তবুও এই ধরনের অভিযোজন বা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সর্বজনীন নয়। বেশ কিছু শিল্পের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বয়ংক্রিয় নির্মাণ খাত, ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি পড়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি চাপে পড়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ব্যবসায় মুনাফা কমে গেছে।’

‘আমার ধারণা এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে। যাই হোক, আমি ইউক্রেনের পাল্টা প্রতিরোধ দেখছি, এর ফল রাশিয়ার উপলব্ধি বদলে দিতে পারে।’

‘ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চল পুনর্দখলের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু আশা তো রয়েছে।’

ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার লক্ষ্যে পরিবর্তন আসেনি

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল লুজিন বলেন, ‘মূল দৃশ্যপট একই—তীব্রতাবৃদ্ধি। রাশিয়ার প্রথমবারের গুরুতর প্রচেষ্টার পর এখন দ্বিতীয়বারের মতো হামলা চলবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় রাশিয়া নতুন করে হামলার ক্ষেত্রে আরও ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে। রাশিয়ার যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়নি। তারা ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিতে চায়।’

রাশিয়ার সক্ষমতাকে উপেক্ষা করা যাবে না

ওয়াগনারের সাবেক যোদ্ধা মারাত গাবিদুলিন, যিনি সিরিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছেন, তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের অনুকূলে থাকা পরিস্থিতি ভাঙতে চূড়ান্ত প্রতিরোধ শুরু করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই সম্পদ ও সক্ষমতার অভাব রয়েছে।’

‘রাশিয়ার সৈন্যরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়। তারা সিদ্ধান্তে এসেছে, পরিস্থিতিতে সংশোধন এনেছে, কিছু ভুল সংশোধন করেছে, তবে উল্লেখযোগ্যভাবে নয়।’

‘এমনকি যুদ্ধের আগে, আমি অনুমান করেছিলাম, ইউক্রেনের সৈন্যরা সশস্ত্র আগ্রাসনের প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ২০১৪ সালে তারা যেমন ছিল, এখন তেমনটি নেই। এখন তার শক্তি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তারা আধুনিকও হয়েছে।’

‘সৈন্যরা সহনশীলতা দেখিয়েছে। তারা ইউক্রেনকে রক্ষার সংকল্পে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। সব ক্ষেত্রে তারা সফলতা পায়নি, কিছু অপূর্ণতাও রয়েছে।’

‘একটি বিপদ রয়েছে। এই যুদ্ধ এখন অবস্থানগত যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে কী পরিমাণে সরঞ্জাম-অস্ত্র দেবে এবং সৈন্যরা কীভাবে এসব অস্ত্র ব্যবহার করবে, এর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে।’

‘আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে দক্ষতা আনতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। যদি সংঘটিত যুদ্ধের পুরো প্রক্রিয়ায় অস্ত্রগুলো খাপ খেয়ে যায়, সেগুলো যদি পরিচালিত হয়, তবে খুব সম্ভবত ইউক্রেনের সৈন্যরা চূড়ান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাশিয়ার সৈন্যদের সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারবে।’

‘পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্রের সুবিধা একেবারে পরিষ্কার, এই বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। ইউক্রেনের এখনো জনবল রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ডাকার সক্ষমতা রয়েছে, ক্ষতিপূরণের সক্ষমতা রয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সামরিক ইউনিট গঠন করে তাদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণও দিতে পারবে।’

‘তবে কোনো কিছুর পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। কারণ, রাশিয়া এখনই হাল ছাড়ছে না। তাদের নির্দিষ্ট রসদ মজুত রয়েছে। তাদের সামরিক ও শিল্প কমপ্লেক্স কাজ করছে। অর্থনীতির অন্য কোনো খাতে উন্নয়ন না করে, সব কিছুই যুদ্ধকেন্দ্রিক সমর্থনের দিকে যাচ্ছে।’

‘রাশিয়া অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছে। একেবারে নিখুঁত না হলেও, এসব অস্ত্র, ট্যাংক গোলাবারুদ যথেষ্ট আধুনিক। সব কিছু নতুন করে তৈরি করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সক্ষমতাকে উপেক্ষা করা যাবে না।’

সূত্র বলছে, যুদ্ধবিরতি অসম্ভব

রুশ সাংবাদিক ফারিদা রাস্তামোভা বলেন, ‘পুতিনের অবস্থান আগের মতোই স্থির। তার নিরাপত্তা কৌশল, রাশিয়ায় নিজের শক্তি দেখাতে তিনি যেসব ব্যবহার করেন, সেগুলোর কোনো কিছুতে সামান্য পরিবর্তনও আসেনি। তিনি সৈন্যদের ঠিকমতো ভরণপোষণ করেন, বেতন বাড়ানোসহ সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকেন। আগামী কয়েক বছরে হয়তো নিরাপত্তা-প্রতিরক্ষায় রেকর্ড পরিমাণ বাজেট দেখা যাবে। রাশিয়ায় এই মুহূর্তে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মতো বিরোধী কেউ নেই।’

‘রাশিয়ার সমাজে এই যুদ্ধের বড় প্রভাব রয়েছে। সমাজবিদ্যার জরিপ অনুযায়ী আমরা কয়েকটি প্রবণতার দিকে দৃষ্টি দিতে পারি। যুদ্ধ যখন শুরু হয় এবং সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা যখন দেওয়া হয়, প্রতিবারই রাশিয়ার সমাজে ঝাঁকুনি লেগেছে। এটি হতাশার দিকে নিয়ে গেছে। গণবিক্ষোভের কোনো সুযোগই ছিল না, কারণ দমনকারীরা যথেষ্ট শক্তিশালী। যা ঘটছে, তার বিরোধিতা করার কোনো পথ নেই।’

‘যা চলছে, তা বিবেচনা করলে মনে হয়, নিশ্চিতভাবেই আমরা আরও একটি বছর যুদ্ধের মধ্যেই বাস করতে যাচ্ছি। পুতিনপন্থি চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ বলেছিলেন, বিশেষ অভিযান এক বছরের পরই শেষ হবে। বেশ আকর্ষণীয় বিবৃতি। আমি নিশ্চিত নই, এটি কীসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এটি কৌতূহলপূর্ণ।’

‘আমাদের সূত্র যা বলে, তাতে এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধবিরতি অসম্ভব। রাশিয়া এখনো অগ্রসর হতে চাইছে। ইউক্রেনও আত্মসমর্পণ করতে চায় না। পরিস্থিতি শান্ত হবে কিংবা যুদ্ধে বিরতি আসবে, এমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।’

কোনো পক্ষেরই সরাসরি জয়ের পথ নেই

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সংঘাত ও সংঘাত পরবর্তী অঞ্চলে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করা আলমুত রশোওয়ানস্কি বলেন, ‘আমার মনে হয় দমন কার্যক্রম এবং কেন্দ্রীভূত প্রচার-প্রচারণা চলতে থাকবে। সম্ভবত সব অঞ্চলের জনজীবনে এটি প্রসারিত হবে। যেমন উদাহরণ হিসেবে যেতে পারে, বিদ্যালয় কাঠামোতেও এর প্রসারণ ঘটতে পারে।’

‘আমার ধারণা, সব ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নাগরিক সমাজ, উচ্চশিক্ষা, কলা ও সংস্কৃতিতে বাস্তব-উপলব্ধি করা বিদেশি প্রভাব আরও কমানো হবে। ধীরে ধীরে অর্থনীতিকে এখনকার চেয়ে আরও বেশি পরিমাণে যুদ্ধের পথে ঠেলে দেওয়া হবে। আমরা হয়তো সৈন্য সমাবেশের ক্ষেত্রে নতুন কিংবা আরও কঠোর নীতি দেখতে পাব। তরুণদের হয়তো বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না।’

‘নীতি-নির্ধারণ এবং শাসন প্রক্রিয়ায় নতুন মুখ কিংবা নতুন কোনো ধারণার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসবে। এটিই প্রকৃত ক্ষতি। কারণ ব্যাপকভাবে সংঘটিত স্টেরিওটাইপসের বিপরীতে রাশিয়ায় নীতিগত সমস্যা এবং স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সৃজনশীল পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে প্রকাশ্যে লোকজন কথা বলে থাকে। আর মেধাবী নীতিনির্ধারকের কোনো অভাব নেই।’

‘এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উৎসাহ দেখতে পাই না। তাদের মধ্যে কেবল অবসাদ আর হতাশা। এখন কেউ তাদের উজ্জ্বল ও সুখী ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না।’

‘রাশিয়ার লাখ লাখ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কারণ ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সমাবেশে ডাকার ভয় তাদের মধ্যে রয়েছে। একইভাবে অনেকে ভয়ে রয়েছে, কিন্তু তারা দেশ ছেড়ে যেতে পারছে না।’

‘রাশিয়ানদের বড় একটি অংশের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবর্ণ হয়ে গেছে, তবে করোনার প্রথম বছরের মতো নয়। দেশে এক ধরনের গম্ভীর ভাব বিরাজ করছে।’

‘শিগগিরই এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। কোনো পক্ষেরই সরাসরি জয়ের পথ নেই। কোনো পক্ষই স্বীকার করছে না যে, তারা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চায়। এমন কোনো ইঙ্গিতও নেই যে, রাশিয়া অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’

‘সম্ভবত মনে করার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে, বলতে গেলে প্রতিদিনই। রাশিয়া-ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা প্রতিদিনই কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সমন্বয় করে যাচ্ছেন। নিয়মিত সফল বন্দি বিনিময়ও হচ্ছে।’

‘এটি কোনো জল্পনা-কল্পনা নয় কিংবা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কার্যত সব শান্তি প্রক্রিয়াই শুরু হয় যুদ্ধরতদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের মাধ্যমে, বিশেষ করে মানবিক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এভাবেই বিশ্ব কাজ করে থাকে, সবসময় এভাবেই করে এসেছে। শুধু কয়েকটি কারণে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হচ্ছে না।’

খবর আল জাজিরার| সূত্র:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর|




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top