হার্ভার্ডের আরও ৬০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ২০:১৬

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ (এইচএইচএস) হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করেছে। হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতিগত বৈষম্য ও ইহুদি বিদ্বেষ দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হলো এই সিদ্ধান্তে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (এইচএইচএস) স্থানীয় সময় সোমবার জানায়, হার্ভার্ড বারবার অ্যান্টি-সেমিটিক হয়রানি ও বর্ণবৈষম্য রোধে ব্যর্থ হওয়ায় বহু বছরের ফেডারেল অনুদান বাতিল করা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার।
সোমবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে এইচএইচএস জানায়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি বিরোধী হয়রানি এবং বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বহুবছরের বেশ কয়েকটি অনুদান বাতিল করা হচ্ছে, যার মোট পরিমাণ আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন ডলার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে বৈষম্য সহ্য করা হবে না। ফেডারেল তহবিল এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই সমর্থন দেবে, যারা সব শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত ২২০ কোটি ডলারের বেশি অনুদান স্থগিত করে। চলতি মাসের শুরুতে শিক্ষা বিভাগের সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহন এক চিঠিতে জানান, হার্ভার্ড গবেষণার জন্য আর সরকারি অর্থ পাবে না। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষাকে উপহাসে পরিণত করেছে।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করেছে। এই আইনে প্রেসিডেন্টকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থার (আইআরএস) তদন্ত শুরু বা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার গত সপ্তাহে জানান, গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।
দ্বন্দ্বের সূত্রপাত মার্চে, যখন ট্রাম্প দেশজুড়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। বিশেষত, এসব ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট তাদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ কর্মকাণ্ড ও ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন।
প্রতিবাদী ছাত্রনেতারা বলেন, তাদের কর্মসূচি গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে গণহত্যার অভিযোগও রয়েছে।
এপ্রিলেই প্রশাসন হার্ভার্ডের প্রথম অনুদান স্থগিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদি বিদ্বেষ মোকাবিলায় প্রশাসনের চাপানো শর্ত প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এতে তাদের স্বায়ত্তশাসন হুমকির মুখে পড়বে। এসব শর্তের মধ্যে ছিল— শৃঙ্খলাবিধি সংস্কার, বৈচিত্র্য উন্নয়ন কার্যক্রম বাতিল এবং প্রশাসনের মতে ‘ইহুদি বিরোধী’ কর্মসূচির বহিরাগত নিরীক্ষা।
ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি রাজনীতিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে চরম বামপন্থা প্রচারের অভিযোগ করে আসছেন। তাদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান ডানপন্থি মতামত দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।