সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ডুমুরিয়ায় তিন মেয়াদে এক যুগ ধরে ইন্সট্রাক্টর মনির হোসেন

বদলি ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ, উঠছে একের পর এক অভিযোগ

এস কে বাপ্পি, খুলনা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪

ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর মনির হোসেনে । ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর মোঃ মনির হোসেনের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত নানা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তিন মেয়াদে প্রায় এক যুগ ডুমুরিয়ায় কর্মরত থাকার পর সদ্য তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হলেও এখনও বদলির আদেশ ঠেকাতে রাজধানীতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত ২৮ অক্টোবর ভোলার চরফ্যাশনে বদলি হন মনির হোসেন। কিন্তু বদলির পর থেকেই ডুমুরিয়ায় অবস্থান ধরে রাখতে নানা অজুহাত তৈরি করেন তিনি। এমনকি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এবং নিজের মেয়েকে ভুয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে দেখিয়ে অধিদপ্তরে প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে—তার মেয়ে ২০২২ সালেই এসএসসি পাস করেছে।

মনির হোসেন প্রথমবার ডুমুরিয়ায় যোগ দেন ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি। এরপর স্থানীয় ক্ষমতাধরদের তোষামোদ করে চার বছর চাকরি করার পর ২০১৭ সালের ৫ মার্চ বদলি হন। একই বছর ১০ অক্টোবর আবার ডুমুরিয়ায় যোগ দেন। এরপর আবারও তিন বছর কাটিয়ে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বদলি হন। তৃতীয়বার ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আবারও ডুমুরিয়ায় ফেরেন। প্রতি বারই তৎকালীন এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও তার অনুসারী শিক্ষক নেতাদের সহযোগিতায় বহাল তবিয়তে ছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

তবে গত বছর ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি দ্রুত নিজের অবস্থান বদলে ফেলেন। উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি দায়িত্ব পান খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে।

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পরিষদে সীমাহীন অনিয়ম, বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। মাত্র ৩–৪ জন শিক্ষক অনুসারীকে নিয়ে তিনি ইউপি পরিষদ পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ মেম্বারদের।

ইচ্ছেমতো প্রকল্প তৈরি করে পছন্দের ব্যক্তি ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে মাসোহারা গ্রহণ, সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রভাবশালী কয়েকজনকে অধিকাংশ প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন ইউপি সদস্যরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খর্ণিয়া ইউনিয়নে বরাদ্দ পাওয়া (কাবিখা-কাবিটা ও টিআর) মোট বরাদ্দের বড় অংশই দেওয়া হয়েছে ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোল্লা আবুল কাসেম, ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ রবিউল ইসলামকে

এই দু’জনকে দেওয়া হয়েছে নগদ ও খাদ্যশস্য মিলিয়ে মোট ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ টাকার কাজ। বাকী ৭টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত তিন নারী সদস্যকে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রায় বঞ্চিত করা হয়েছে।

অতিরিক্তভাবে মোল্লা আবুল কাসেমকে আরও ৭.৬৩৮৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

১,৫ এবং ২–৪–৬ নম্বর ওয়ার্ডে অল্প কিছু বরাদ্দ থাকলেও ৭ নং ওয়ার্ড, ৮ নং ওয়ার্ড, ৩ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য, এদের পুরোপুরি উন্নয়ন কাজ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে মনির হোসেন বলেন “আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি।”
তবে একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি অসংলগ্ন উত্তর দেন এবং ডুমুরিয়ায় এত বছর ধরে কর্মরত থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি।

গত ১০ এপ্রিল খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হোসেন দিদার মারা গেলে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান মনির হোসেন। এরপর থেকেই ইউনিয়নে জনভোগান্তি, বৈষম্য ও সদস্যদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top