বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২

৯০ দশকের জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রীর করুণ পরিণতি: শিবচরে নিঃসঙ্গ জীবনের ইতি

মাদারীপুর প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০৭

ফাইল ছবি

বাংলা চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রীর জীবনের অবসান হলো মাদারীপুরের শিবচরে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন এ অভিনেত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৫৫ বছর। বিকেলে উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের কুমেরপাড় এলাকায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভগ্নিপতি আবুল বাসার।

১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব-রুস্তুম’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনীত এ ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পায় এবং বনশ্রী দর্শকের কাছে পরিচিতি পান। নব্বই দশকে একে একে “নেশা”, “মহা ভূমিকম্প”, “প্রেম বিসর্জন” ও “ভাগ্যের পরিহাস”সহ প্রায় ৮ থেকে ১০টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক মান্না, আমিন খান ও রুবেলের বিপরীতে নায়িকা চরিত্রে তাকে দেখা যায়।

অভিনয়ের বাইরে ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলেন বনশ্রী। তিনি বিটিভিতে আবৃত্তি করতেন এবং উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় শেখেন সুবচন নাট্য সংসদে, সেখান থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পান।

তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়েন বনশ্রী। শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেছেন, এমনকি তিনবেলা খাবারের জন্য বাসে বাসে হকারি করতেও বাধ্য হন। জীবনের শেষ সময়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। প্রায় চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন। ধনী সমাজ ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তেমন সাড়া পাননি।

শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার একটি সরকারি গুচ্ছগ্রামের ছোট্ট ঘরেই ছিল তার শেষ আশ্রয়। রান্না করতে না পারায় অনেক সময় প্রতিবেশীদের কাছে খাবার চাইতে হতো।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন বলেন, “নায়িকা বনশ্রী আমাদের সাথেই বসবাস করতেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। অথচ তাকে অর্থকষ্টে দূর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছে। আমরা প্রায়ই তাকে সহযোগিতা করতাম।”

মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে ১৯৪৪ সালের ২৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন বনশ্রী। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রিনা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটবেলায় ঢাকায় বসবাস শুরু করেন এবং সেখান থেকেই সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু হয়।

একসময় লাখো দর্শকের প্রিয় এই অভিনেত্রীর জীবনের শেষ অধ্যায় কেটেছে একাকিত্ব ও মানবেতর কষ্টে। বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র বনশ্রীর এমন পরিণতি শুধু সিনেমাপ্রেমীদের নয়, সমগ্র সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যই এক বেদনাদায়ক অধ্যায় হয়ে থাকবে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top