বাংলা সাহিত্যের কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন আজ
বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন আজ (১৩ নভেম্বর)। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে আজ বৃহস্পতিবার নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশপল্লী জুড়ে মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী আয়োজন। সকালে কেক কাটা, কবর জিয়ারতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, সন্তান নিশাত ও নিনিতসহ নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অসংখ্য ভক্ত।
হুমায়ূন আহমেদ ছেলেবেলায় ‘কাজল’ নামে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ অফিসার ও লেখক। বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই। বাবার চাকরির বদলির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈশব ও কৈশোর কাটে তার। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন প্রথম শ্রেণিতে ডিস্টিংশনসহ। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
পেশাগত জীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে—প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু সাহিত্যই হয়ে ওঠে তার জীবনের প্রধান পরিচয়।
তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর একে একে রচনা করেন ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’, ‘মাতাল হাওয়া’ সহ তিন শতাধিক বই।
তার সৃষ্টি জনপ্রিয় চরিত্রগুলো—হিমু, মিসির আলি, শুভ্র, রূপা—বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা।
টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রেও হুমায়ূন আহমেদের অবদান অনন্য। তার জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ইত্যাদি।
চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি রেখে গেছেন অমর ছাপ। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’—সবগুলোই দর্শকপ্রিয় এবং পুরস্কারজয়ী।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে নিজের হাতে গড়া নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যের এই অমর লেখক আজও বেঁচে আছেন কোটি পাঠকের হৃদয়ে—তার সৃষ্টি, তার শব্দ, তার জাদুতে।
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।