আদালতে যা বললেন শ্যামল দত্ত-মোজাম্মল বাবু-শাহরিয়ার কবির

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে দুটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয় তাদের। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

আবেদনে বলা হয়, গত ৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা আরোপ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সারাদেশের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ সম্বোধন করলে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেন। উক্ত আসামি বিগত সরকারের তেলবাজ ও দালাল প্রকৃতির ও ইসলাম বিদ্বেষী বুদ্ধিজীবী। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি।

ছাত্রদের সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রতিহত করতে ১ হতে ১৪ নং আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায়, পরস্পর যোগসাজশে ৭১ টিভির মাধ্যমে উসকানিমুলক বক্তব্য প্রদান করে। ছাত্রদের এই যৌক্তিক দাবিকে ৭১ টেলিভিশন টকশোর মাধ্যমে অযৌতিক হিসেবে দেশের জনগণের মধ্যে প্রচার করে।

শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার লক্ষে ৭১ টিভি ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে বক্তব্য ও কলাম প্রকাশ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরীহ ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে উৎসাহিত করে। এরই ফলশ্রুতিতে গত ১৮ জুলাই নিউ সার্কুলার রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে ভিকটিম লিজা আক্তার (১৯) গুলিবিদ্ধ হন। পরে গত ২২ জুলাই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

পরে আদালত জানতে চান, তারা কিছু বলবেন কি না। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমি অসুস্থ, হাঁটতে পারি না। আমি ১০০টিরও বেশি বই লিখেছি। কোথাও দেখতে পাবেন না, ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি। রিমান্ড দেবেন বা না দেবেন আপনার ইচ্ছা। অসুস্থ, হুইল চেয়ার ছাড়া আমি চলতে পারি না।’

এরপর মোজাম্মেল বাবু কথা বলতে চাইলে আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে দুই হাত জোর করে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমার জয় বাংলা, জয় হিন্দ বক্তব্য ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। আমি ক্যানসারে আক্রান্ত।’

এরপর শ্যামল দত্তের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। শ্যামল দত্ত আদালতকে বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ৩৭ বছর সাংবাদিকতা করেছি। ৩৩ বছর একই হাউজে আছি। আমি কোনো দিন সরকারের সুবিধা নেইনি। কোনও প্লট নেইনি, টিভি (লাইসেন্স) নেইনি।

আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। সম্পাদক পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ঘটনার সময় আমি ঢাকাতে ছিলাম না। সরকারের নির্দেশনা আছে যাচাই-বাছাই না করে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা না হয়। তারপরও গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। ঘটনা ঘটনার সময় ওই জায়গাতেও ছিলাম না।’ পরে আদালত তাদের প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে, গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পর তাদের মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া দিয়ে ভারত সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করেছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

পুলিশের দাবি— ধোবাউরার স্থানীয় লোকজন তাদের আটকের পর পুলিশের কাছে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান ও প্রাইভেটকারের চালক সেলিমকেও আটক করা হয়।

গত ৬ আগস্ট, সপরিবারে ভারতে যাওয়ার সময় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। ওইদিন বিকাল ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তিনি সপরিবারে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top