উপুড় হয়ে ঘুমানো কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর? জানালেন বিশেষজ্ঞ
লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৩১
ঘুমের ভঙ্গি ব্যক্তি ভেদে আলাদা। কেউ গুটিসুটি হয়ে, কেউ পাশ ফিরে, আবার অনেকেই উপুড় হয়ে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেকের ক্ষেত্রে এই ভঙ্গিতেই দ্রুত ঘুম আসে। তবে দীর্ঘদিন উপুড় হয়ে ঘুমানো শরীরের জন্য আদৌ উপকারী কি না—তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতের বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের লিড কনসালট্যান্ট (ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি) ডা. সুনীল কুমার।
ঘাড় ও মেরুদণ্ডে পড়ে প্রথম প্রভাব
দীর্ঘ সময় উপুড় হয়ে ঘুমালে ঘাড় একদিকে ঘোরানো অবস্থায় থাকে, ফলে মেরুদণ্ড স্বাভাবিক সোজা ভঙ্গিতে থাকে না। ডা. সুনীল কুমারের মতে, টানা ৩০ দিন প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘণ্টা এভাবে ঘুমালে স্বল্পমেয়াদে ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে অস্বস্তি এবং পিঠে শক্তভাব দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস থেকে স্থায়ী ঘাড়ের ব্যথা, কোমরের নিচের অংশে অতিরিক্ত চাপ, পেশির ভারসাম্যহীনতা এবং শরীরের ভঙ্গি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এমনকি বুকের পেশি শক্ত হয়ে গিয়ে দিনের বেলায় কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজমে বাধা
উপুড় হয়ে ঘুমালে বুক ও পেটের ওপর সরাসরি চাপ পড়ে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসকে অগভীর করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে গভীর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ ব্যাহত হয়।
একই সঙ্গে পেটের ওপর চাপ পড়ায় অম্বল বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরের ওজনের চাপে হাত-পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালি চেপে গিয়ে রক্ত সঞ্চালনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্নায়ু চাপে পড়া ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
দীর্ঘদিন উপুড় হয়ে ঘুমালে ঘাড় ও কোমরের অস্বাভাবিক ভঙ্গির কারণে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে অনুভূতি, জয়েন্টে জ্বালা, পেশিতে শক্তভাব এবং দিনের বেলাতেও চলাফেরায় অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
কীভাবে বদলাবেন ঘুমের অভ্যাস
যারা উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস পরিবর্তন করতে চান, তাদের জন্য কিছু সহজ পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সুনীল কুমার—
হাঁটুর নিচে সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করুন
শরীরের পাশে শক্ত বালিশ রাখুন, যাতে উপুড় হয়ে গড়াতে না পারেন
মাঝারি শক্ত ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন
ঘাড়ের চাপ কমাতে পাতলা বালিশ ব্যবহার করুন বা প্রয়োজনে বালিশ ছাড়াই ঘুমান
বডি পিলো ব্যবহার করে শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখুন
কোমরের নিচে গুটানো তোয়ালে রেখে হালকা সাপোর্ট নিন
ধীরে ধীরে পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং হাঁটুর মাঝে বালিশ রাখুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি শুধু আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে মেরুদণ্ড, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং সামগ্রিক শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।