সহিংসতা বাস্তব, কিন্তু ছবি ভুয়া—গোপালগঞ্জ নিয়ে সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৭:০২

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ, তারপর ১৪৪ ধারা, সেনাবাহিনী মাঠে, কারফিউ জারি—কিন্তু ঘটনার আড়ালে কী চলছিল সামাজিক মাধ্যমে? পুরনো ছবি, ভুল তথ্য, আর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার—সাবধান, আপনিও হয়তো বিভ্রান্ত হচ্ছেন!
গত ১৬ জুলাই, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির—এনসিপি’র—সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশ শেষে গাড়িবহরে হামলা হয়, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, প্রাণহানি, এমনকি সেনা মোতায়েন পর্যন্ত ঘটে।”
এই সহিংসতার পটভূমিতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মাঠ। কিন্তু ঘটনার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক বিভ্রান্তিকর ছবি ও পোস্ট। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়—সংঘর্ষের বাস্তব ছবি না দেখিয়ে একাধিক পুরনো ও সম্পর্কহীন ছবি ছড়ায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট।
এসএম জাকির হোসেন এবং আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজেরাই এই ভুয়া পোস্ট ছড়ান বলে প্রেস উইং অভিযোগ করেছে। যেমন—একটি ছবিতে দেখা যায়, আগুনের পাশে এক আহত কিশোরকে বহন করছে জনতা। দাবি করা হয়, এটি গোপালগঞ্জের সংঘর্ষের ছবি।
কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়—ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের এক ভিন্ন ঘটনার। আরেকটি ছবি—এক ডিবি সদস্যকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। কিন্তু সেটিও ২০২২ সালের নারায়ণগঞ্জের ঘটনা। একটি হাসপাতালে আহতদের দৃশ্য—তাও পুরনো, ২০২৩ সালের মার্চ মাসের একটি ভিন্ন ঘটনার ছবি।
এমনকি একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে বলা হয়, সে নাকি গোপালগঞ্জে সহিংসতায় অংশ নিয়েছে। অথচ ছবিটি ছিল গাজীপুরের সফিপুরে ধারণ করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট, আর সেটিও ২০২৩ সালের আগস্টের।
প্রেস উইংয়ের ভাষায়, এটি ছিল একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অপারেশন’—যার উদ্দেশ্য ছিল সহিংসতার প্রকৃত তথ্য আড়াল করা এবং ভিন্ন পক্ষকে দায়ী করা। এমনকি সেনাবাহিনীকে নিয়েও ছড়ানো হয় মিথ্যা পোস্ট—যেন তারা নাকি বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।
বাস্তবতা হলো—বুধবারের সহিংসতা শুরু হয় যখন এনসিপির সমাবেশ শেষে তাদের গাড়িবহর আক্রমণের শিকার হয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাতে। সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়, পুলিশের গাড়ি ও ইউএনওর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়। প্রশাসন বাধ্য হয়ে কারফিউ জারি করে ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
রাজনৈতিক বাস্তবতা যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি কঠিন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা—বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আপনার দায়িত্ব—শুধু দেখাই নয়, যাচাই করে দেখা।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।