চোখহীন চার বিড়াল উদ্ধার: ধানমন্ডিতে নৃশংসতার অভিযোগ, তদন্তে পুলিশ
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৫
গত কয়েকদিনের মধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক ও তার আশপাশের এলাকা থেকে মোট চারটি বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে; এর মধ্যে একটিরও চোখ নেই। স্থানীয়রা ও উদ্ধারকারীরা এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দেখছেন না এবং ঘটনা নৈতিকভাবে নৃশংস বলে মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বরের মধ্যে ধানমন্ডির ১২/এ রোডের মসজিদুদ-তাকওয়ার পাশের লেক ও শুক্রাবাদ এলাকা থেকে চারটি আহত বিড়াল উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
উদ্ধারকৃত প্রথম বিড়ালটি পাওয়া গেল ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায়—বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী যয়নব রহমান চৌধুরী হাঁটতে গিয়ে লেক পাড়ে একটি বিড়াল দেখতে পান। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন ওই বিড়ালটির চোখ নেই। পরে জানতে পারেন, গত কয়েক দিন আগেও ওই এলাকায় একই ধরনের আরও দুইটি আহত বিড়াল দেখা গেছে, যাদের চোখও উপড়ে ফেলা হয়েছিল। ভয় পেয়ে তার বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে তিনি ও অন্য একজন ক্লিনিকে নিয়ে যান; পরে এলাকার অন্যান্য ভালবাসার মানুষেরা এগিয়ে এসে এসব প্রাণীর দেখাশোনা নিচ্ছেন।
উদ্ধারকৃত বিড়ালগুলোর বর্তমান দেখাশোনা করছেন দয়াগঞ্জে বসবাসরত দম্পতি ইলিন জাহান ও রাকিব হোসেন। উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, পশুদের চিকিৎসা ও ধরবার যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ঘটনা ঘটিয়েছেন কারা—তা বের করা তাদের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে আছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, “পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা কনডাক্ট ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক অবস্থার ফলে কেউ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার থাকলে পশুপাখি নির্দয়ভাবে আঘাত করা, আনে একটি ধরনের গ্র্যাটিফিকেশন বা তৃপ্তি।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখহীন বিড়ালের ছবি ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। বাংলাদেশের পশু নির্যাতন সম্পর্কিত আইনে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ দণ্ডনীয়—আইন অনুযায়ী এর জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তবে আইনটি কার্যকরভাবে প্রয়োগের উদাহরণ এখনও সীমিত।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা বলেছেন, অভিযোগকারীদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “বিড়াল বা যে কোনো পশুর চোখ উপড়ে ফেলা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। লেক-কেন্দ্রিক যেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা আছে, সেগুলো আমরা বিশ্লেষণ করছি। অপরাধীকে হাতেনাতে পেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে”—ওসি বলেন।
স্থানীয়রা আশা করছেন দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় এবং পশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
নিফ্লা৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।