যে কারণে হাসিনা-খালেদা দীর্ঘ ১৭ বছর মুখোমুখি হননি
গণতন্ত্রের সহযোদ্ধা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী: সম্পর্কের ১৭ বছরের ফাটল
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৫
একসময় তাঁরা ছিলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অভূতপূর্ব সহযোদ্ধা। রাজপথের লড়াই থেকে গড়ে ওঠা এই সুসম্পর্কের সাক্ষী ১৯৯০ সালের এরশাদ পতনের পরের শপথ অনুষ্ঠান। এমনকি, ১৯৯৩ সালে তারেক রহমানের বিয়েতে শেখ হাসিনা সস্ত্রীক উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক কেন এতটা তিক্ততায় রূপ নিলো যে, দীর্ঘ সতেরো বছরেও তাঁদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি?
এরশাদবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার পরই শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করে, খালেদা জিয়া হন প্রধানমন্ত্রী আর শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী। সম্পর্ক তখনো ভালো থাকলেও, ধীরে ধীরে তা ভোটের লড়াইয়ে পরিণত হয়। তবে সম্পর্কের বড় ফাটল তৈরি হয় কিছু স্পর্শকাতর ঘটনায়।
প্রথমত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার ১৫ই আগস্ট জন্মদিন পালন শুরু করা। শেখ হাসিনা এটিকে বুকে ছুরি চালানোর মতো মনে করতেন। দ্বিতীয়ত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচলেও অনেকে প্রাণ হারান। সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় আওয়ামী লীগ মনে করে, এই হামলার নেপথ্যে ছিল বিএনপি।
এরপরও এক-এগারোর সময় সাব-জেলে বন্দি থাকাকালে তাঁদের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল—একজন আরেকজনের মুক্তি দাবি করেছিলেন, এমনকি রান্না করা খাবারও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চূড়ান্ত রূপ নেয়। খালেদা জিয়াকে তাঁর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, কার্যালয়ে বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করা—এসব ঘটনায় সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়। ২০১৫ সালে ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাসায় দেখা করতে গেলেও, তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি হওয়া এবং অসুস্থতা—বিএনপি সমর্থকদের কাছে যা প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসেবে বিবেচিত—দুই নেত্রীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে চূড়ান্ত বিবাদে পরিণত করে। গণতন্ত্রের দুই কাণ্ডারীর পথ আজ দীর্ঘ ১৭ বছরের দূরত্বে বিভক্ত।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।