নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় ‘গানম্যান’ প্রক্রিয়া তদারকি
বিবিসি বাংলা | প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২২
সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। অনেকেই নিজেও নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আবেদন প্রক্রিয়ার পর অন্তত ২০ জনের জন্য গানম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, পুলিশের বিশেষ শাখা যাচাই-বাছাই করছে, আরও কারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গানম্যান পেতে আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে গানম্যান বা বডিগার্ড পাওয়ার বিষয়টি মূলত নির্ভর করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল-এর ওপর। এটি কোনো সাধারণ অধিকার নয়, বরং সরকারের বিশেষ অনুমোদিত ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে যে কাউকে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে গানম্যান বরাদ্দ দিতে পারে।
অনেক সময় রাজনৈতিক ঝুঁকি বা গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে সরকার নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গানম্যান দেয়। সাধারণ নাগরিককে এই ধরনের নিরাপত্তা পেতে লিখিতভাবে পুলিশকে জানাতে হয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়।
প্রক্রিয়া:
-
আবেদনকারীর নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তা গোয়েন্দা সংস্থা বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ যাচাই করে।
-
যাচাই-বাছাই শেষে পুলিশের প্রশিক্ষিত একজন গানম্যান নিযুক্ত করা হয়।
-
যার জন্য গানম্যান নিযুক্ত করা হচ্ছে, তার মতামত নেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, "অফিসিয়ালি সরকার নিয়োগ করলেও গানম্যানকে কাকে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ব্যক্তির পছন্দ গুরুত্বপূর্ণ।"
গানম্যানের দায়িত্ব ও খরচ
-
সরকারি গানম্যান সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক গুলিও বরাদ্দ থাকে।
-
খরচ বহন করে সরকার, যেহেতু তারা সরকারি কাজে নিয়োজিত।
-
আনসার ভিডিপির সদস্যদের নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি নিরাপত্তার কাজে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
কে এবং কেন গানম্যান পান?
সরকারি প্রটোকল অনুযায়ী, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গানম্যান বা সশস্ত্র দেহরক্ষী পান। এর মধ্যে রয়েছেন:
-
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী
-
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য
-
বিচারপতি, সচিব বা সমপর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
-
বাহিনী প্রধান
পুলিশের সাবেক প্রধান নুরুল হুদা বলেন, "নিরাপত্তা দিতে পুলিশের কাছে আবেদন করা যায়, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক নয়।"
অতীতের উদাহরণ
বাংলাদেশে অতীতেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বিশেষভাবে গানম্যান বা দেহরক্ষী নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে।
-
২০১৪ সালে মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পাশাপাশি হুমকির কারণে সরকার অনেকের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল।
-
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে ২৬২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তায় সাদা পোশাকে গানম্যান নিযুক্ত করা হয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।