বৃহঃস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দামামা: উগ্র জাতীয়তাবাদ, নাকি কৌশলগত বাণিজ্য?

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৫, ১৮:৩০

ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়ার রাজনীতি এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই মিছিলের অংশীদার ভারত-পাকিস্তানও। প্রতিবেশি দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা আবারও চরমে। আতঙ্কের নাম অপারেশন সিঁদু। সেদিন হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে ওঠলো পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীর।

মঙ্গলবার গভীর রাতের ঘটনা। ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে ভারতের হামলা। যেগুলোকে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ বলছে দেশটি। তারা বলেছে, কোনো সামরিক স্থাপনা নয়, বরং সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ঘটানো হয়েছে হামলা। তবে পাকিস্তান ভারতের দাবি অস্বীকার করেছে। তার অভিযোগ তুলেছে- বেসামরিক লোকজন ও মসজিদ লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তানের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান এ হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলেছে। প্রতিবাদে গোলাবর্ষণসহ দিয়েছে সামরিক জবাব।

দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, ভারতের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলি ও কামানের গোলায় ভারতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। যদিও ভারত সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারত অবশ্য হামলাগুলোকে সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ধ্বংসে প্রতিরোধমূলক অভিযান বলছে।

হামলার পরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছে। তারা জানিয়েছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মাসে কাশ্মীরের বৈসারান উপত্যকায় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রাণ হারান ২৬ জন। সেই প্রাণহানির ঘটনার জেরে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা।

পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশে যেন যুদ্ধ থামতেই চাইছে না। পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে দায়ী করেছে দিল্লি। কেউ আবার পাকিস্তান সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই হামলার ঘটনা। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ মানতেই চাইছে না। তারা এর আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে।

এই সংঘাত কী শুধু দুই দেশের মধ্যে কেবল উত্তেজনা? নাকি এটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক শঙ্কা। আসলে পারমাণবিক প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। এই যুদ্ধ কী কেবল উগ্র জাতীয়তাবাদ, নাকি কৌশলগত বাণিজ্য? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ অনিশ্চয়তায় ভরা। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটা অশনিসংকেত।

মনে রাখতে হবে এই যুদ্ধে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব কিন্তু বহুমাত্রিক। এতে বাংলাদেশের বাণিজ্য, ট্রানজিট ও জ্বালানি নির্ভরতা যেমন ক্ষতির মুখে পড়বে। তেমনি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাপ্লাই চেইন, আমদানি ব্যয় এবং সীমান্ত বাণিজ্য বাধার মুখে পড়বে।

সংঘাত শেষে কোনো পক্ষই আসলে বিজয়ী হয় না। যুদ্ধের কী আসলেই কোন বিজয় আছে, নেই তো। যুদ্ধে বরং বিপন্ন হয় অর্থনীতি, মানবিকতা এবং স্থিতিশীলতা। চলমান পাক-ভারত যুদ্ধে দুই দেশেরই অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব পড়বে আমাদের দেশেও। ফলে কুয়াশায় ঢাকা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ কারও কাম‍্য হতে পারে না।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top