বৃহঃস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ কাণ্ড

২০ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ফার্মা কোম্পানির মালিক গ্রেপ্তার

মিঠু মুরাদ | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৪

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মধ্যপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে শিশু মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনায় জড়িত ভেজাল কোল্ডরিফ কাশির সিরাপের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মালিক রঙ্গনাথন গোবিন্দনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তামিলনাড়ু-ভিত্তিক এই কোম্পানির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, শিশুদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি এবং অপরাধমূলক হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্তে জানা গেছে, কোল্ডরিফ কাশির সিরাপে বিপজ্জনক মাত্রায় ডাইথিলিন গ্লাইকল (DEG) মেশানো হয়েছিল—যা মানুষের কিডনি, লিভার ও স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।
তামিলনাড়ুর ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় দেখা যায়, যেখানে সর্বোচ্চ ০.১ শতাংশ DEG ব্যবহার অনুমোদিত, সেখানে কোল্ডরিফ সিরাপে পাওয়া গেছে ৪৬-৪৮ শতাংশ পর্যন্ত DEG।

এই সিরাপ খাওয়ার পর মধ্যপ্রদেশে অন্তত ২০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। রাজস্থানেও কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় এই সিরাপের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। মৃত্যুর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের কিডনি বিকল হয়ে যায়।

কাশির সিরাপ ট্র্যাজেডির পর থেকেই রঙ্গনাথন গোবিন্দন পলাতক ছিলেন। তার গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। অবশেষে এক নাটকীয় মধ্যরাতের অভিযানে চেন্নাই থেকে তাকে আটক করা হয়।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ টিম রঙ্গনাথনের গাড়ি ট্র্যাক করে এবং দীর্ঘ নজরদারির পর তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে কোম্পানির কাঞ্চিপুরম কারখানায় নিয়ে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়।

পুলিশ এখন তাকে ছিন্দোয়ারা আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে শিশুমৃত্যুর ঘটনাগুলোর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এখন তদন্তের পরিধি বাড়ানো হবে—রাসায়নিক সরবরাহকারী, মজুদদার ও মেডিকেল প্রতিনিধিদের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণ করে দেখা হবে, কীভাবে বিষাক্ত সিরাপ বাজারে পৌঁছে গেল।

কাঞ্চিপুরমের কারখানায় পরিদর্শনের সময় বিলবিহীন DEG পাত্র, মরিচা পড়া যন্ত্রপাতি এবং স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তামিলনাড়ু সরকার ইতিমধ্যে কারখানার লাইসেন্স স্থগিত করেছে ও সমস্ত মজুদকৃত সিরাপ জব্দ করেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস ১৯৯০ সালে একটি প্রাইভেট ফার্ম হিসেবে নিবন্ধিত হয়, কিন্তু পরে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রেজিস্টার থেকে বাদ পড়ে। তবুও প্রতিষ্ঠানটি “মালিকানাধীন” কাঠামোয় ব্যবসা চালিয়ে আসছিল, যা নিয়ন্ত্রক তদারকির ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর অন্তত নয়টি রাজ্য কোল্ডরিফ সিরাপ বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, অনেক কোম্পানিই প্রতিটি ব্যাচের কাঁচামাল ও সক্রিয় উপাদান পরীক্ষা করছে না, যা গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

 

সুত্র: এনডি টিভি



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top