বৃহঃস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

বাঘেরও পরিবারে ঝামেলা! এলাকা নিয়ে মা-মেয়ের থাবা-থাবি লড়াই

মিঠু মুরাদ | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যানে ঘটেছে এক বিরল ও রোমাঞ্চকর বন্যপ্রাণীর মুহূর্ত—যেখানে মা বাঘিনী ঋদ্ধি (T-124) এবং তার প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে মীরা মুখোমুখি হয়েছে নিজেদের অঞ্চলের দখল নিয়ে। বন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এটি ছিল দুটি বাঘিনীর মধ্যে স্বাভাবিক আঞ্চলিক লড়াই, যা সাধারণত ঘটে যখন শাবকেরা বড় হয়ে নিজেদের এলাকা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করে।

মঙ্গলবার সকালে রণথম্ভোরের ৩ নম্বর জোনে সাফারিতে থাকা পর্যটকেরা হঠাৎই এই নাটকীয় মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেন। প্রথমে মা-মেয়ে বাঘিনীকে কাছাকাছি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মীরা তার মায়ের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করতে এগিয়ে আসে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি রূপ নেয় হিংস্র সংঘর্ষে—গর্জন, থাবা, ও ধুলোর ঝড়ে কেঁপে ওঠে পুরো জঙ্গল।

লড়াইটি অল্প সময়ের হলেও ছিল অত্যন্ত তীব্র। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ ঋদ্ধিই লড়াইয়ে জয়ী হন, আর পরাজিত মীরা সরে যায় বনের গভীরে। দুজনেই কিছুটা আহত হলেও গুরুতর নয় বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।

বন কর্মকর্তাদের মতে, ঋদ্ধির তিনটি শাবক এখন প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং নিজেদের আলাদা এলাকা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ কারণেই মা-মেয়ের মধ্যে এই সংঘর্ষ হওয়া স্বাভাবিক আচরণ।

রণথম্ভোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাঘিনী ঋদ্ধি বিখ্যাত বাঘিনী মাচালির পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরসূরি। সে বাঘিনী অ্যারোহেডের কন্যা, যিনি নিজেও মাচালির বংশধর। শক্তি ও সৌন্দর্যে ঋদ্ধিকে তার প্রপিতামহীর মতোই চিত্তাকর্ষক হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

বর্তমানে ঋদ্ধি তার মায়ের পুরনো এলাকার বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। তাকে প্রায়ই দেখা যায় জোন ৩ ও ৪-এর পদম হ্রদ, রাজ-বাগ, মালিক হ্রদ ও মান্ডুব এলাকায়—যা রণথম্ভোরের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল মাচালির কিংবদন্তি উত্তরাধিকার, যা এখন বহন করছে ঋদ্ধি।

এর আগে রণথম্ভোরের আমা ঘাটি এলাকায়ও একটি পুরুষ বাঘের মৃত্যু হয়েছিল আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে। মাত্র ৩.৫ বছর বয়সী সেই বাঘটি (T-2309) নিহত হয়েছিল বড় বাঘ গণেশ (T-120)-এর সঙ্গে সংঘর্ষে।

রণথম্ভোরের এই সাম্প্রতিক মা-মেয়ের লড়াই বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবনের এক অনন্য, বিরল ঝলক তুলে ধরেছে—যা প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেরই প্রতিফলন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top