মিস ইউনিভার্সের নাম ঘোষণা
বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৭
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর মিস ইউনিভার্সের মুকুট জিতেছেন মেক্সিকান সুন্দরী ফাতিমা বশ। তীব্র নাটকীয়তায় ভরা মিস ইউনিভার্স ২০২৫ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আসরে বিজয়ীর মুকুট উঠল ২৫ বছর বয়সী এই মানবিক কর্মীর মাথায়। মাত্র কয়েকদিন আগেই লাইভ-স্ট্রিম হওয়া এক বৈঠকে থাই পেজেন্ট ডিরেক্টরের প্রকাশ্য তিরস্কারের শিকার হন তিনি, যা মুহূর্তেই ঝড় তোলে বিশ্বজুড়ে। প্রতিবাদে কয়েকজন প্রতিযোগীর ওয়াকআউট আর ঠিক সেই ঘটনার পরই বশক হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজোড়া ভক্তদের অন্যতম প্রিয় মুখ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে থাইল্যান্ডে আয়োজিত মহাসমারোহে গতবারের মিস ইউনিভার্স, ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া ক্যায়ের থেইলভিগের হাত থেকে মুকুট গ্রহণ করেন ফাতিমা। এই প্রতিযোগীতায় রানারআপ হয়েছেন আয়োজক দেশের প্রাভিনার সিংহ। শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন ভেনেজুয়েলার স্টেফানি আবাসালি, ফিলিপাইনের আটিসা মানালো এবং আইভরি কোস্টের অলিভিয়া ইয়াসে।
বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার সুপার বোল হিসেবে খ্যাত মিস ইউনিভার্সে এ বছর অংশ নেন ১২০ দেশের প্রতিনিধি। প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন নাদিন আয়ুব; তিনি সেমিফাইনালে পৌঁছালেও শীর্ষ ৩০ থেকে বিদায় নেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মার্কিন কৌতুকশিল্পী স্টিভ বায়ার্ন, উদ্বোধনী পরিবেশনায় ছিলেন থাই তারকা জেফ স্যাচুর।
দীর্ঘ তিন সপ্তাহের যাত্রায় প্রতিযোগীরা থাইল্যান্ড জুড়ে ঘুরে ঘুরে অংশ নেন রিহার্সাল ও নানা ইভেন্টে। বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল কস্টিউম শোকেস যেখানে প্রতিযোগীরা নিজেদের দেশের ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিধান করেন চোখ ধাঁধানো পোশাক। মিস ইউএসএ অড্রি একার্ট হাজির হন সাইমন ভিলালবার নকশা করা চমকপ্রদ বাল্ড ঈগল কস্টিউমে। একইদিন প্রিলিমিনারির সন্ধ্যার গাউন রাউন্ডে ভয়াবহভাবে পড়ে যান জ্যামাইকার গাব্রিয়েল হেনরি, যাকে পরে স্ট্রেচারে করে নেওয়া হয়। পরে মিস ইউনিভার্স প্রেসিডেন্ট রাউল রোচা জানান হেনরির কোনো হাড় ভাঙেনি এবং তিনি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন।
এদিকে ফাইনালে প্রতিযোগীদের করা হয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সুযোগ পেলে কোন বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন, এবং কিশোরী মেয়েদের ক্ষমতায়নে কীভাবে মিস ইউনিভার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন। উত্তরে ফাতিমা বশ বলেন, আপনার স্বকীয়তার শক্তিতে বিশ্বাস রাখুন। আপনার স্বপ্নের মূল্য আছে, আপনার হৃদয়ের মূল্য আছে। কাউকে আপনার মূল্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে দেবেন না।
বিতর্ক আর নাটকীয়তা পেরিয়ে ফাতিমা বশের এই অভিষেক জয় এবার নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মিস ইউনিভার্স মুকুট জেতার পাশাপাশি ফাতিমা কি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার ভুবনে নতুন এক পরিবর্তনের বার্তাও রেখে গেলেন?
এদিকে বিচার প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ তুলে এবারের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেল থেকে সরে দাঁড়ান দুজন বিচারক। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) লেবানিজ-ফরাসি সংগীতশিল্পী ওমর হারফুশ আট সদস্যের জুরিবোর্ড থেকে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। হারফুশের পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ফরাসি ফুটবল ম্যানেজার ক্লদ মাকেলেলে। তবে পদত্যাগের কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেন তিনি।
হারফুশ তার পোস্টে লেখেন, ১৩৬ দেশের প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ৩০ জন ফাইনালিস্ট বাছাইয়ের জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক জুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের আসল আট সদস্যের জুরির কেউই উপস্থিত ছিলেন না, আমিও না। আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনে হতবাক হয়েছি।
হারফুশ দাবি করেন, অনানুষ্ঠানিক কমিটিতে এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন, যাদের কিছু প্রতিযোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ অনানুষ্ঠানিক জুরি কীভাবে কাজ করছেন বা কীভাবে তারা আসল জুরির ভূমিকা অকার্যকর করছেন, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেননি হারফুশ । তবে তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, কোনো বাইরের দলকে প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন বা ফাইনালিস্ট বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সংগঠনের মতে, হারফুশ হয়তো বিয়ন্ড দ্য ক্রাউন নামে একটি কর্মসূচিকে অনানুষ্ঠানিক জুরি ভেবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। এটি মূল প্রতিযোগিতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সামাজিক উদ্যোগ। এর নিজস্ব নির্বাচন কমিটি রয়েছে।
অন্যদিকে মাকেলেলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, এটি তার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত। মিস ইউনিভার্স প্ল্যাটফর্ম ক্ষমতায়ন, বৈচিত্র্য ও উৎকর্ষের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব মূল্যবোধ আমি সব সময় লালন করেছি। চলতি মাসের শুরুতেই প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
থাইল্যান্ডের আয়োজক কমিটির পরিচালক নাওয়াত ইটসারাগ্রিসিল একটি প্রাক্-ইভেন্টে মিস মেক্সিকো ফাতিমা বোশকে প্রকাশ্যে জানান, কেন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণামূলক কনটেন্ট পোস্ট করছেন না। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে দেখা যায়, বোশসহ কয়েকজন প্রতিযোগী অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নাওয়াতের দিকে চিৎকারও করছিলেন। পরবর্তী সময়ে নাওয়াত দাবি করেন যে তার কথার কিছু অংশ ভুলভাবে বোঝা হয়েছে। তবু তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয় মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।