শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বপরিমণ্ডলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র

শেখ হাসিনা নবপর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা, মাদার অব হিউম্যানিটি...

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৫৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি, আশা-আকাঙ্খার বিশ্বস্ত ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার বড় সন্তান শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিতে পদচারণা। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। ১৯৭৩ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড.ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন শেখ হাসিনা। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁকে স্বাগত জানায়। উপস্থিত জনতার অভিবাদনের জবাবে তিনি বলেছিলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হতে আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্যমণ্ডিত এই কর্মময় জীবন সহজ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। অন্তত ২১ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।

রাজীব রায়হান

১৯৮১ সাল থেকে গত ৪১ বছর দলটির সভাপতি পদে আছেন তিনি। অন্যদিকে টানা তিনবারসহ মোট চার মেয়াদে প্রায় ১৯ বছর ধরে তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও মেট্রোরেলসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে তিনি।

সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে সংকট সমাধানের সূত্র তুলে ধরেছেন। যুদ্ধ, অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রভাব এবং স্বার্থগত সংঘাতকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবমুক্তির প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেই সঙ্গে জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টানিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই আহ্বান বিশ্বশান্তি ও মানবমুক্তির দিকদর্শন।

দেশে দেশে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। তবে নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলী তাকে আসীন করেছে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

সহজ সারল্যে ভরা তার ব্যক্তিগত জীবন। কঠোর পরিশ্রম, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবন-যাত্রায় কোথাও বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার কোনো ছাপ নেই। শেখ হাসিনা নবপর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। বিশ্বপরিমণ্ডলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top