সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আন্দোলনের আয়ুর্বেদ: শিক্ষার্থীদের টানা ২০ দিনের লড়াই

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৯

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ২০ দিন ধরে স্বতন্ত্র আইন-কাউন্সিল গঠনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দেশের সকল ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠনসমূহ।

এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস এবং একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি বর্জন করেছেন, ফলে মিরপুর-১৩ নম্বরে অবস্থিত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আজ ২১ জুলাই, রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশ নেন তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০-এর অধিক শিক্ষার্থী-

* সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ

* রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজ, লক্ষ্মীপুর

* হামদর্দ ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ, বগুড়া

আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আলাদা কাউন্সিল ছাড়া ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালায় BMDC-এর আদলে একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

এই পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন, উচ্চশিক্ষা, নিয়োগ ও পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে নানা ধরনের আইনি ও কাঠামোগত জটিলতা তৈরি হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জনাব ডা. মো: সারোয়ার বারী জানান, দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।তিনি আগামী ২২ জুলাই আইন-সম্পর্কিত সকল পক্ষের অংশগ্রহণে একটি জরুরি সভা ডেকেছেন। ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মিশন বলেন, “১৯৯৬ সালে বলা হয়েছিল, অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনসহ একটি পৃথক কাউন্সিল গঠন করা হবে। কিন্তু ২৯ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুধু আশ্বাসে নয়, এবার আমরা আইন নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরব।”

এদিকে, চলমান আন্দোলনের কারণে ৩৬তম ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম প্রায় ব্যর্থ হতে চলেছে। সরকারিভাবে ভর্তি শুরুর তারিখ ছিল ১৩ জুলাই, কিন্তু আন্দোলনের কারণে কেউই ভর্তি হতে পারেননি। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিবছর ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বিভাগে মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, কাউন্সিল গঠনের আগে কেউই ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তারা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এবং দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

পরিষ্কার ভাষায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, “নতুন ভর্তি সময়সূচি ঘোষিত হলেও আমরা ক্যাম্পাসে থেকেই তা প্রতিহত করব। আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিল বাস্তবে গঠিত হয়।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top