মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি:
আগুনে পুড়ে নয়, মানবতার আলো হয়ে জ্বলে উঠলেন দুই শিক্ষিকা
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা | প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২৩

নিজেদের জীবন বিলিয়ে বাঁচালেন শিক্ষার্থীদের — মেহেরিন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম নিপু আজ জাতির অনুপ্রেরণা
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে গত ২১ জুলাই বিকেলে ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা—
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান।
মুহূর্তেই লেলিহান আগুনে চারদিক ঘিরে যায়। আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু হয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে।
সেই ভয়াবহ আগুনের মধ্যেও দুই শিক্ষিকা নিজেদের জীবন বাজি রেখে ছুটে গেছেন শিশুদের বাঁচাতে।
তারা হলেন— মেহেরিন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম নিপু।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই মেহেরিন চৌধুরী তার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বের করে আনতে শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায়, তিনি একে একে ১৫–২০ জন শিশুকে গেট পার করিয়ে দেন।
কিন্তু শেষবার ফিরেছিলেন বাকি শিশুদের খুঁজতে— আর সেই ফেরাটিই হয়ে ওঠে তার জীবনের শেষ যাত্রা।
আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রায় শতভাগ পুড়ে যান তিনি।
অন্যদিকে প্রাথমিক শাখার শিক্ষক মাসুকা বেগম নিপু ছিলেন তার ক্লাসরুমে।
আতঙ্কিত শিশুদের শান্ত করে বের করে আনেন একে একে।
নিজে বের হওয়ার সময় থাকলেও, তিনি ফিরলেন না যতক্ষণ না শেষ বাচ্চাটিও নিরাপদে।
৮৫ শতাংশ দগ্ধ শরীরে হারিয়ে গেলেও, রেখে গেলেন আত্মত্যাগের অবিনশ্বর দৃষ্টান্ত।
দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে স্বামী মনসুর হেলালকে বলেছিলেন মেহেরিন চৌধুরী—
“ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?”
তিনি ছিলেন দুই সন্তানের জননী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি।
অন্যদিকে মাসুকা বেগম নিপু মৃত্যুর আগে সহকর্মীকে বলে যান,
“আমি যদি না বাঁচি, আমাকে আমার বড় বোনের বাড়িতেই দাফন কোরো।”
তার ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে দাফন করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামে।
সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মকর্তারা জানান,
দুই শিক্ষিকার সাহসিকতায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রাণে বেঁচে গেছে।
তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্থির ও দৃঢ় ছিলেন শিশুদের পাশে—
যা না ঘটলে হতাহতের সংখ্যা আরও ভয়াবহ হতে পারত।
মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলছেন,
‘শিক্ষক মানে শুধু পড়ানো নয়, শিক্ষক মানে জীবন দিয়েও দায়িত্ব পালন।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসান বলেন,
“মেহেরিন ম্যাম আর নিপু ম্যাম আমাদের শিখিয়েছেন— ভালোবাসা মানে ত্যাগ।”
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন,
“তারা ছিলেন আমাদের পরিবারের প্রাণ। তাদের আত্মত্যাগ শিক্ষকতার আসল অর্থ প্রকাশ করেছে।”
‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’ শুধু প্রাণহানির ঘটনা নয়—
এটি আজ হয়ে উঠেছে মানবতার প্রতীক।
দুই শিক্ষিকার অদম্য সাহস, ভালোবাসা ও মমতার গল্প ছুঁয়ে গেছে পুরো জাতিকে।
তারা দেখিয়ে গেছেন—
শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, এটি জীবনের এক পবিত্র আহ্বান।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।