শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়
বাংলাদেশ ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের আহ্বান, দিল্লির নীরবতা অব্যাহত
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১২
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফিরিয়ে দিতে ভারতের প্রতি আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রায়ের পরও ভারত এ বিষয়ে কোনো পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান জানায়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে এই দুই সাবেক নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা একজন অভিযুক্ত থেকে পলাতক ফাঁসির আসামিতে পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের অন্য দেশে আশ্রয় দেওয়া হবে “অবন্ধুসুলভ আচরণ” এবং ন্যায়বিচারের প্রতি “অবজ্ঞা”। ভারতকে অবিলম্বে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, দণ্ড ঘোষণার পর নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই ভারতকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সোমবার রাতেই অথবা মঙ্গলবার সকালে চিঠি পাঠানো হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ একবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠালেও ভারত শুধু প্রাপ্তি স্বীকার করেছিল। কোনো জবাব দেয়নি।
২০১৩ সালের বাংলাদেশ-ভারত বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে, কমপক্ষে এক বছর কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ হলেই প্রত্যর্পণের সুযোগ আছে। ২০১৬ সালের সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই প্রত্যর্পণ সম্ভব—প্রমাণ দাখিলের প্রয়োজন নেই।
তবে চুক্তিতে একটি ব্যতিক্রমী ধারা রয়েছে:
-
যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশ মনে করে অভিযোগগুলো ন্যায়বিচারের স্বার্থে আনা হয়নি,
-
অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে,
তাহলে তারা প্রত্যর্পণ অস্বীকার করতে পারে।
ভারতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, মৃত্যুদণ্ডের রায় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভারত হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য নয়।
ভারতের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত আলজাজিরাকে বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ভারত তাঁকে প্রত্যর্পণ করবে না।”
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, “ফাঁসির রায়ের কারণে তাঁর প্রাণসংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত বাধ্য নয় তাঁকে ফিরিয়ে দিতে।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা রায়ের বিষয়ে অবগত এবং বাংলাদেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করবে। তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে কি না—এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এবং সুশীল সমাজের একাংশ রায়কে স্বাগত জানালেও মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি রায়কে “ষড়যন্ত্র” মনে করছে।
কলকাতার আইনজীবী এ জামান বলেন, “বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে। শেখ হাসিনার ভূমিকা ক্ষমার অযোগ্য।”
অপরদিকে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর বলেন, “মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি, কিন্তু জুলাইয়ের গণহত্যার কঠোর বিচার হওয়া উচিত ছিল।”
বাংলাদেশ বলেছে, ভারত যদি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন দেশটির মূল লক্ষ্য রায় কার্যকর করা এবং পলাতক দুই আসামিকে ফিরিয়ে আনা।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।