শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

গোয়েন্দা সূত্র

হাদি হত্যার মাস্টারমাইন্ড সাবেক কেরানীগঞ্জ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৪

ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সাবেক কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’-এর নাম উঠে এসেছে।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পরিকল্পিত এই কিলিং মিশনের অর্থ ও অস্ত্রের জোগানদাতা ছিলেন শাহীন চেয়ারম্যান নিজেই। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নাম রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, শাহীন চেয়ারম্যান ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, হাদির ওপর হামলার পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন হামিদ।

জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির ভূমিকা এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তার বিভিন্ন বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ চরম ক্ষুব্ধ ছিল। দলটি হাদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপরই তাকে হত্যার জন্য হিটলিস্টের প্রথম টার্গেট হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

জানা যায়, শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তবে তিনি মাফিয়া ডন হিসেবেই বেশি পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তিনি ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে অনেক আগেই পুলিশের খাতায় তার নাম তালিকাভুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। বরং প্রশাসনের একাংশ তাকে সমীহ করে চলত। এসব প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো শাহীন চেয়ারম্যানও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে দীর্ঘদিন নীরব থাকলেও গত তিন-চার মাস ধরে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মুঠোফোনে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং হিটলিস্টভুক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ কল ও খুদেবার্তার (এসএমএস) সূত্রে হাদি হত্যাকাণ্ডে শাহীন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনার আগে ও পরে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের সঙ্গে কিলারদের একাধিকবার যোগাযোগের তথ্যও মিলেছে।

এছাড়া ভারতে অবস্থানরত আরও কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় থাকা স্লিপার সেলের সদস্যদের সমন্বয় করা হচ্ছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সদস্যের অনেকেই এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, হাদি হত্যা মামলার তদন্তে সন্দেহভাজনের তালিকায় কয়েকজন রাজনীতিকের নামও উঠে এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম।

পাশাপাশি পলাতক শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জ জেলার দুজন ছাত্রলীগ নেতাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন,
“আমরা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ পরিকল্পনাকারীদের পরিচয় প্রকাশ পাবে।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top