মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২

অর্থনীতি, শিক্ষা ও মানবিক নেতৃত্বের এক যুগান্তকারী অধ্যায়

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। এরশাদ সরকারের শেষ সময়ে দেশ পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যনির্ভর থাকলেও খালেদা জিয়া সরকার সেই নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেয়।

তার সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে আর্থিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়। ভ্যাট প্রবর্তন ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিদেশি সাহায্যনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

এই মেয়াদে বাংলাদেশের জিডিপি গড়ে বছরে ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, যেখানে এরশাদ আমলে এ হার ছিল ৩.৬ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত করতে তার সরকার প্রণয়ন করে—

  • ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১

  • আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩

  • বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩

এছাড়া প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য বৃত্তি এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ সময় নারী শিক্ষার উন্নয়নে চারটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

১৯৯৩ সাল থেকে ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি চালু হয়ে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ১,২৫৫টি ইউনিয়নে সম্প্রসারিত হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।

১৯৯১ সালে স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের অনুপাত ছিল ৫৫:৪৫, যা ১৯৯৬ সালে দাঁড়ায় ৫২:৪৮। পাঁচ বছরে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ প্রায় ৩০ লাখ বৃদ্ধি পায়।

১৯৯৩ সালের অক্টোবরে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল—

“এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিসেস জিয়া মেয়েদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছেন।”

বিআইডিএসের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে কারখানার সংখ্যা ৮৩৪টি থেকে বেড়ে ২,৩৫৩টিতে দাঁড়ায় এবং রপ্তানি আয় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশ রক্ষায় তার সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল—

  • ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন

  • ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাস

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। খালেদা জিয়া তাদের আশ্রয় দেন এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেন।

১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। পরবর্তীতে জাতিসংঘের উদ্যোগে চুক্তির মাধ্যমে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৩ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমার।

১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’ আঘাত হানার সময় তার সরকার মাত্র দুই মাসের পুরোনো ছিল। তিনি নিজে উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন।

তার আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের সেনা সদস্যরা ‘অপারেশন সি অ্যাঞ্জেল’ নামে ঐতিহাসিক মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়।

এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার ১৯৯৩ সালে উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ করে, যা পরবর্তীতে বহু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top