রাজনৈতিক মঞ্চে শেখ হাসিনার উত্থান–পতন যেভাবে
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮
বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রভাবশালী নাম শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বিরোধী দলীয় নেতা ও চার-চতুর্থাংশ সময়ের প্রধানমন্ত্রী। প্রায় সাড়ে ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন এবং ভারত পালিয়ে যান। সেখানেই জানতে পারেন—দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে ও মানবতাবিরোধী অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
শুরুটা ভারতনির্বাসনে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। পরে দলীয় ভাঙন ঠেকাতে আব্দুর রাজ্জাক, ড. কামাল হোসেন ও জোহরা তাজউদ্দিনের উদ্যোগে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৮১ সালে সম্মেলনে অনুপস্থিত অবস্থায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। দুই মাস পর দেশে ফিরে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা, হামলা, গ্রেফতার
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে শেখ হাসিনা দেশের প্রথম নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী হন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্যে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় “মাইনাস টু” আলোচনার মধ্যেই চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার হন।
টানা সাড়ে ১৬ বছর ক্ষমতায় ও বিতর্ক
২০০৮ সালে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। এই সময়ে ঘটে বিডিআর বিদ্রোহ—যা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।
তার নেতৃত্বে শুরু হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার, যেখানে জামায়াত নেতাদের অনেকেই দণ্ডিত হন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বর অভিযান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়—সরকারি হিসেবে নিহত ৮৪৪ জন, জাতিসংঘের মতে সংখ্যা আরও বেশি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও ‘নিশিরাতের নির্বাচন’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ—তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি জাতীয় নির্বাচনই বিতর্কের মুখে পড়ে—
-
২০১৪: একতরফা নির্বাচন
-
২০১৮: নির্বাচনের আগের রাতে সিল মারা
-
২০২৪: ডামি প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ
একই সঙ্গে গুম-খুন, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাপক হয়।
উন্নয়ন ও সমালোচনা—দুই বিপরীত ইমেজ
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল–এর মতো বড় অবকাঠামোতে তার সরকার প্রশংসা পেলেও একই সঙ্গে “ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন”–এর অভিযোগও ওঠে।
রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ আছে কি?
মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রা অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি ফিরতে পারবেন কি না—তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন—
“যদি নতুন শাসকরা তার চেয়েও খারাপ করেন, তাহলে শেখ হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।