ভারত হয়ে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরে পৌঁছাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:২৭

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা বুকিত বিনতাং। সেখানকার বাংলাদেশি খাবার হোটেলগুলোতে প্রায় সারা বছরই মেলে পদ্মার ইলিশ। একেক টুকরো ইলিশ বিক্রি হয় ২৫–৩০ রিঙ্গিত দরে, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো-বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকার পরও বিদেশে কীভাবে মিলছে এ মাছ?
কুয়ালালামপুরের এক হোটেল ব্যবসায়ী পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জানান, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসে না। ভারত হয়ে আসে ফ্রোজেন ইলিশ। ভারতীয় লাইসেন্স ব্যবহার করে এ রপ্তানি হলেও আসল চুক্তি হয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।
একই তথ্য মিলেছে সিঙ্গাপুরের মোস্তফা এলাকার বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও। তারা জানান, বাংলাদেশের ইলিশ ভারত হয়ে পৌঁছায় সিঙ্গাপুরে। বরিশালের প্রবাসী ইলিয়াস সরদার বলেন, “এখানে এক কেজি সাইজের ইলিশ কিনতে হয় ৫০–৬০ ডলারে, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৬–৭ হাজার।”
কলকাতার হাওড়া বাজারের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী জানান, পূজার সময় বছরে একবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইলিশ আসে। এর বাইরে বছরের বাকি সময় বাংলাদেশ থেকে আসে চোরাই পথে। এর ৮০ ভাগ আবার এখান থেকেই রপ্তানি হয় বিদেশে।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে দরদাম ঠিক করে পাঠান ইলিশ। মাঝখানে কাগজপত্রে ব্যবহার হয় ভারতীয় লাইসেন্স। এভাবেই লোকসান ছাড়া চলছে ব্যবসা।
ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে ইলিশ পাচারের নিয়ন্ত্রণ করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এতে যুক্ত আছেন বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল এ বছরও চারটি লাইসেন্সে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি কলকাতায় থেকে ব্যবসা চালাচ্ছেন। সেখানেই তার শ্বশুরবাড়ি ও নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে।
এছাড়া পাবনার সেভেন স্টার ও কেবিসি নামে আরও দুই রপ্তানিকারক কলকাতার বাজারে নিজেদের আড়ত, গদি ও ফ্ল্যাটের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রপ্তানিকারকদের কেউ মুখ খোলেননি। ভারতের ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশ আমরা গ্রহণ করি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিই। রি-এক্সপোর্টের কোনো বিষয় নেই।”
বাংলাদেশ ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নিজামউদ্দিন বলেন, “দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্ন থেকেই সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায়।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।