ভাইকে ফাঁসাতে ‘হত্যা নাটক’; জীবিত ব্যক্তি মৃত দেখানোয় উল্টো মামলায়
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়কে সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়ে আপন ভাইকেই ‘নিহত’ দেখিয়ে মামলা করেন মোস্তফা কামাল ওরফে মোস্ত ডাকাত। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনাই সাজানো। যে ভাইকে গুলিতে নিহত দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে, সেই দুলাল ওরফে সেলিম (মূল নাম – সোলায়মান সেলিম) জীবিত রয়েছেন। ফলে উল্টো মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে এবার নিজেই আইনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বাদী মোস্তফা।
৩ অগাস্ট যাত্রাবাড়ীতে ‘হত্যা’ ঘটনা সাজিয়ে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৪২ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে সবাইকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিবি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের এসআই ইনামুল ইসলাম তদন্তে নেমে দেখতে পান, যাকে নিহত দেখানো হয়েছে সেই সোলায়মান সেলিম সম্পূর্ণ সুস্থ ও জীবিত। তিনি বর্তমানে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার বেলতলী বাজারে বসবাস করছেন।
সেলিম জানান—
“আমাকে মেরে জমি দখল করতে চায়। এজন্য আমাকে ‘খুন হয়েছে’ দেখিয়ে মামলা করেছে। পরে সত্যি সত্যি খুন করলেও কাউকে দোষ চাপাতে পারত। এখনো আতঙ্কে থাকি।”
পারিবারিক জমি-সংক্রান্ত বিরোধেই বড় ভাই মোস্তফা কামাল তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে চাইছিলেন বলে অভিযোগ সেলিমের।
ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন বলেন—
“বাদী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা মামলা করেছেন। তার বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা করতে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।”
আদালত অনুমতি দিলে বাদীর বিরুদ্ধেই এখন মামলা হবে বলে জানান তিনি।
৩০ নভেম্বর আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সকল আসামিকেই অব্যাহতির সুপারিশ করেছে ডিবি। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
-
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
-
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
-
সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রমেশ চন্দ্র সেন, আসাদুজ্জামান নূর
-
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মশিউর রহমান সজল, অয়ন ওসমান
-
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান
-
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ড
মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো দুইজন — মোহাম্মদ উল্লাহ পাটোয়ারী ও মিরাজ খান—কেও অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
তাদের আইনজীবী বলেন—
“হত্যা ঘটেইনি, কিন্তু তাকে আসামি করা হয়েছে। এটি চরম হয়রানি। এখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করা উচিত।”
তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—
-
বাদী মোস্তফা কামাল এলাকার পরিচিত ‘মোস্ত ডাকাত’
-
হত্যা ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে ১০ বছর ধরে পলাতক
-
ভাইদের সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ
-
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সুযোগ নিয়ে মৃত্যু নাটক সাজানো
ডিবি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে—
“ছোট ভাই সেলিমকে হত্যা করে লাশ গুম করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মোস্তফা কামাল মিথ্যা মামলা সাজিয়েছেন।”
মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপিত হবে ২১ ডিসেম্বর।
বাদী মোস্তফা কামালের দেওয়া মোবাইল নম্বর পরে বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।