অজানা কিছু কথা
কারাগার থেকে এভারকেয়ার: কেমন আছেন খালেদা জিয়া!
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:১৭
তিনি আজও দেশের মানুষের কাছে সেই আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই পরিচিত। তিনি বেগম খালেদা জিয়া—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের নাম। যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে শুধু দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীই নন, মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকার প্রধান হিসেবে ইতিহাস গড়েছিলেন।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন এই নেত্রী। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। স্বামী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি হন ফার্স্ট লেডি। মার্গারেট থ্যাচার বা রানি জুলিয়ানার মতো বিশ্বনেতাদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ প্রমাণ করে তাঁর প্রথম জীবনের বর্ণাঢ্যতা।
দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর সামলানো এই গৃহবধূর জীবন হঠাৎ থমকে যায়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর তিনি অল্প বয়সেই স্বামী হারানোর কঠিন সত্যের সম্মুখীন হন। স্বামীর মৃত্যুর পর, দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে নামতে বাধ্য হন। তেমন কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিপর্যস্ত ও দিশেহারা বিএনপির হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি সাধারণ সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেন এবং দ্রুতই ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
কিন্তু রাজনীতিতে তাঁর যাত্রা সহজ ছিল না। প্রথমেই তাঁকে মোকাবিলা করতে হয় জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনকে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি সর্বাত্মক আন্দোলনের সূচনা করেন এবং সাত দলীয় জোটের স্থপতি হন। তিনি সামরিক সরকারের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন বর্জন করেন, যেখানে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা অংশ নিয়েছিল। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তাঁকে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার আটক করা হয়।
সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখার কারণে তিনি আপোষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর নিরলস সংগ্রামের ফল আসে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়।
তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে বেশ কিছু বড় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে নারী কর্মীর ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়। বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা এবং ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনা হয়।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষা করেন। জাতিসংঘে গঙ্গার পানি-বণ্টন সমস্যা উত্থাপন এবং হোয়াইট হাউসে রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি কোনো আসনেই পরাজিত না হওয়ার এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯তম স্থানে স্থান দেয়।
রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০০৭ সালে গ্রেফতার, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, এমনকি বিদেশে নির্বাসনের চেষ্টাও হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক মহল এই সাজাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবেই দেখছে।
বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা কাটছে না। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকায় তাঁকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেছে। সামরিক প্রধানেরা তাঁকে দেখতে গিয়েছেন এবং তাঁর চিকিৎসায় ব্রিটিশ ও চীনা বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসেছে। তাঁর সুস্থতার জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসী এখন দোয়ার আর্তি নিয়ে অপেক্ষায়।
বিষয়: খালেদা জিয়া বেগম খালেদা জিয়া

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।