শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

পদ্মা সেতুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে কর্মহীনতার ছায়া

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৪১

সংগৃহীত

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটের যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পায়। এর ফলে ঘাটগুলোর উপর নির্ভরশীল শ্রমিক, হকার ও ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রা চরমভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

২০২২ সালের ২৫ জুন সেতুর উদ্বোধনের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রাজধানী যাতায়াত সহজ হয়ে গেছে। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটের চারপাশের জীবিকা নির্ভর হাজারো মানুষের জীবন প্রায় থমকে গেছে। এক সময় দেশের প্রধান নৌপথ হিসেবে পরিচিত এই ঘাটে দিনরাত গাড়ির দীর্ঘ সারি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট ও হকারদের ভিড় লক্ষ্য করা যেত।

ফেরিঘাটের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে ৭টি ফেরিঘাটে দিনে ১৮-২০টি ফেরি চলাচল করত, প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যানবাহন নদী পার হতো। এখন মাত্র ৭-৮টি ফেরি দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। লঞ্চঘাটের চিত্রও করুণ—প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩ হাজার যাত্রী পারাপার হয়, যেখানে আগে ১২-১৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত।

স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল মিয়া বলেন, “আগে দিনে লাখ টাকার ব্যাচা বিক্রি হতো, এখন খরচ উঠানোই অসম্ভব।” চা বিক্রেতা সাকাত হোসেন বলেন, “আগে দিনে হাজার কাপ চা বিক্রি হতো, এখন ১০০ কাপও বিক্রি হয় না। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধের কথা ভাবছি।”

স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, “নতুন প্রজন্ম হয়তো কখনো কল্পনাও করতে পারবে না ঘাটের একসময়কার ব্যস্ততা। এটা শুধু যাতায়াতের পথ ছিল না, বরং দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।”

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন জানান, “সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন পারাপার হতো। বর্তমানে সব ফেরি সচল থাকলেও গাড়ির জন্য ফেরিতে অপেক্ষা করতে হয় এবং ঘাটে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই।”

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার মো. নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার যাত্রী লঞ্চে পদ্মা পার হতো। এখন সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে দেড় হাজার যাত্রী পারাপার হয়। বেশিরভাগ লঞ্চ অলস সময় কাটাচ্ছে।”

এই পরিবর্তনের ফলে ঘাটের চারপাশের দোকানপাট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রশাসনের উচিত ঘাটের কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top