শৈলমারী নদীর অবনতি: জলাবদ্ধতা ও চর দখলের ঝুঁকি বাড়ছে
এস কে বাপ্পি (খুলনা) প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩২
বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারী নদী এক সময় প্রবল খরস্রোতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে নালায়। ১৯৯৬ সালে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ ও উজানের পানির চাপ না থাকার কারণে নদীতে পলি জমে চর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নদী এখন নদী নয়, বরং এক প্রবাহহীন নালা।
শৈলমারী নদীর অবনতির কারণে উপজেলার ১নং জলমা, বটিয়াঘাটা সদর, গঙ্গারামপুর, সুরখালী ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার উত্তর ডুমুরিয়া এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং মশা, মাছি ও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বে রামদিয়া ৯ কপাটে স্লুইস গেট নির্মাণ করলেও নদীর সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প মেশিন স্থাপন করলেও তাতে জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি।
অন্যদিকে, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভূমিদস্যু চর দখলের কাজে মেতে উঠেছে। তারা রাতারাতি নদীর চর কেটে উঁচু ভেড়ি তৈরি করছে, বালি ভরছে বা মাছ চাষ করছে। এর ফলে নদীর প্রশস্ততা সংকুচিত হচ্ছে এবং আগামী বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের প্লাবনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শৈলমারী নদী বটিয়াঘাটা সদর থেকে পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর মুখে ১০ ভেন্টের স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দ্বারা নদীর খাস জমি দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হলেও এখনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শোয়েব শাত-ঈল ইভান বলেন, “যে কেউ সরকারি সম্পত্তি দখল করলে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত নদী রক্ষায় খননকাজ শুরু করা হবে।”
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ৮-১০ বছরে ধীরে ধীরে নদীটির অবনতি ঘটেছে। এক সময় যেখানে নৌকা চালানো কঠিন ছিল, এখন হেঁটেই পার হওয়া যায়। যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।