বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মশাল মিছিল
নীলফামারী প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৪
নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে কুটিরডাঙ্গা গ্রাম থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মশাল হাতে এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পরিকল্পিত খনন বাস্তবায়িত হলে নদীর দুই পাড়ের হাজারো পরিবার ভিটেমাটি হারাবে। বর্তমানে এসব জমিতে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হয়—ধান, ভুট্টা, আলু, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজসহ নানা কৃষিপণ্য।
তারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে নদী নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ ও একাধিক মামলা চলমান। তাই তারা প্রকল্প বাতিল ও এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এলাকাবাসীর সংগঠন ‘জনগোষ্ঠী’র মুখপাত্র মো. আব্দুল আলিম বলেন, সরকারের অনুমোদিত ভুল প্রকল্পের বিরুদ্ধেই তারা আন্দোলন করছেন। তার দাবি—স্থানীয়দের মালিকানাধীন তিন ফসলি জমি নষ্ট করে পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, “এ প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন হতে দেবো না।”
স্থানীয় বাসিন্দা হেকিম শামিম জানান, পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল এই নদীর দুই পাড়ের জমির ওপর।
তিনি বলেন, “আমরা হুমকি-ধমকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। মশাল মিছিলের মাধ্যমে আমাদের দুর্ভোগ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই।”
কৃষক জাহিদুল ইসলামের মতে, মাঝখানে খনন করলে চারপাশের জমি হারাতে হবে। তবে পুরো ৭৬ কিলোমিটার নদী খনন করলে তারা রাজি।
তিনি জানান, ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের নামে ১১টি মামলায় ৭৫০ জন ভুগছেন। এ কারণে তারা আদালতে সিভিল মামলা করেছেন।
স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তি হযরত আলী বলেন,
“দুই বিঘা জমিতে ১০ জন মানুষের সংসার চলে। বুড়া বয়সে শহরে গিয়ে কাজ করতে পারব না। জমি না থাকলে বাঁচব কীভাবে?”
২০২২ সালের ডিসেম্বরেও নদী খনন নিয়ে বড় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর নতুন করে যন্ত্রপাতি আনার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান,
-
তারা কেবল অধিগ্রহণকৃত জমিতেই জলাধার পুনঃখনন করছেন।
-
কিছু ব্যক্তি দখল করে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন বলে দাবি তার।
-
মোট ১,২১৭ একরের মধ্যে ৬৬৭ একরে খনন কাজ হবে।
তার মতে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচের সুবিধা পাবেন এবং পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়তা করবে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।