শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দেশের লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠানের নাম জনগণই মুছে দিয়েছে: সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ, নরসিংদী প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০১

ছবি: সংগৃহীত

স্কুল–কলেজ থেকে শুরু করে দেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান—এমনকি শৌচাগার পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নামকরণ করা হয়েছিল; আর সেসব নাম জনগণই মুছে ফেলেছে। এটিই ইতিহাসের বিচার—এ মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় ডাঙ্গা–ঘোড়াশাল–পাঁচদোনা সড়কের বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর নামে নামকরণের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “এ সড়কটি বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর নামে নামকরণ করা হলো—এটাই ইতিহাসের বিচার। এভাবেই আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাব।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকে প্রশ্ন করেন সরকার এতদিন কী করল? বছরের পর বছর জমে থাকা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অপকর্ম ঠিক করতেই আমাদের অনেক সময় লেগেছে। আগের সরকার এমনসব অপচয় করেছে—সাবেক রাষ্ট্রপতি নিজের এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক বানালেও সেখানে এখন টেম্পু ছাড়া কিছু চলে না।”

উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, “আপনারা সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করুন। যারা জয়ী হবেন—যে দলেরই হোন আমরা তাদের পাশে থাকব। কিন্তু কেউ যেন আগের মতো ভোটকেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া বা প্রক্রিয়া বিকৃত করার সুযোগ না পায়।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারক ই-আজম বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভাজন দীর্ঘস্থায়ী করতে চাই না। ঐক্যবদ্ধ হলেই কালো ছায়া থেকে মুক্তি মিলবে। এমনও মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাদের মায়েরই বিয়ে হয়নি তাদের নামও তালিকায়। আদালতে যে বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, আশা করি রায়ের মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে।”

অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টাদ্বয় বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর কবর জিয়ারত করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
আরও উপস্থিত ছিলেন বীর প্রতীক ফারক ই আজম (উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক), প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, নেভাল সিরাজের পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা।

পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ২৫ মার্চ ১৯৭১ ছুটিতে নরসিংদীতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বাগবাড়ি–পালবাড়ি–পাঁচদোনা এলাকায় ইপিআর সদস্যদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন এবং ছাত্র–যুবকদের সংগঠিত করে গেরিলা ঘাঁটি স্থাপন করেন।

২ নম্বর সেক্টরের অধীনে নরসিংদী, শিবপুর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার নিয়ে গঠিত গেরিলা ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বহু সফল গেরিলা অপারেশন পরিচালিত হয়।

স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক ঈর্ষা ও ষড়যন্ত্রের জেরে ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আড়াইহাজারের পুরিন্দায় তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top