• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **


বিশ্বের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, যার ৫টি-ই বাংলাদেশে!

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৩৫

বিশ্বের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়

বিশ্বের প্রায় সকল উপকূলীয় অঞ্চলই ঘূর্ণিঝড়ে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়াবিদদের দেয়া তথ্যমতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। আর শেষপর্যন্ত যেগুলো স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দেশভেদে আবার ঘূর্ণিঝড়ের রয়েছে নানান নাম। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, চীনে টাইফুন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইক্লোন। বাংলাদেশও বিভিন্ন সময় বড় বড় বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানিও ঘটে। এরমধ্যে ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। আজ আমরা বিশ্বের বড় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করবো।

ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৯৭০)

১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর ভোলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ঘূর্ণিঝড় ছিল এ অঞ্চলে অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকরতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি এটি। এটি ১৯৭০-এর উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের ৬ষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত। সেই ঝড়ে প্রাণ হারান অন্তত ৫ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে ১ লাখই ছিল জেলে। বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান।

নিনা টাইফুন, চীন (১৯৭৫)

যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়। ভয়াবহ ওই ঝড়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ।

বাকেরগঞ্জের ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ, (১৮৭৬)

প্রায় দেড়শো বছর আগে একটি ঘূর্ণিঝড় এই অঞ্চলে আঘাত হানে, যাকে ভয়াবহতার দিক থেকে পৃথিবীর ষষ্ঠ ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম 'বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়'। বাকেরগঞ্জের উপকূলের (মেঘনার মোহনার ‍নিকটে) ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। এতে বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ।

হাইফোং টাইফুন, ভিয়েতনাম (১৮৮১)

১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে এই টাইফুন আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। সেবার ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। 

৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৮৮)

১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানে ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ হাজার ৭০৮ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ঝড়ে সেবার প্রায় ৭০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টন।

ম্যারিয়েন ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৯১)

এই ঘূর্ণিঝড়কে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২০তম বছরে এসে বাংলাদেশ দেখে এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। এতে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

সিডর, বাংলাদেশ (২০০৭)

আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সমুদ্রে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম 'সিডর'। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে এটি। এতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। এই ঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৮-২০ ফুট। এই ঝড়ে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। রেডক্রসের তথ্যানুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দশ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। সুন্দরবনের বেশ ক্ষতি হয় এতে। ঝড়ে ২১০,০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬০০,০০০ টন ধান বিনষ্ট হয়। সুন্দরবনের পশুর নদীতে বেশ কিছু হরিণের মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। এ ঝড়ে প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার গৃহপালিত পশু এবং হাঁস-মুরগি মারা যায়।

নার্গিস, মিয়ানমার (২০০৮)

সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস। ২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে প্রাণ হারান ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

আইলা, বাংলাদেশ ও ভারত (২০০৯)

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে। ঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়ে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েক লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং ২ লাখ গবাদিপশু প্রাণ হারায় এই ঝড়ে।

হ্যারিকেন ইরমা, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৭)

২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার হ্যারিকেন ইরমা আঘাত হানে। ৩০০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের এই ঝড়ে নিহত হয় ২৮ জন। বারমুডা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৪ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বন্যায় প্লাবিত হয় ফ্লোরিডার বিশাল এলাকা।

হ্যারিকেন মাইকেল, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৮)

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে ১০ অক্টোবর আছড়ে পড়ে হ্যারিকেন মাইকেল। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ১শ’ বছরের মধ্যে এটিই সেখানকার সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়। ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাসে ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট হ্যারিকেনটির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ফ্লোরিডা। গাছপালা-বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে, তছনছ হয় অনেক বসতবাড়ি।

টাইফুন জেবি, জাপান (২০১৮)

জাপানে ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন জেবির আঘাতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও অন্তত ৩০০ জন আহত হন। ঝড়ের আঘাতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেখা দেয় বন্যা ও ভূমিধস।

টাইফুন মাংখুট, হংকং (২০১৮)

চীনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গুয়াংডংয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে টাইফুন মাংখুট আঘাত হানে। এর আগে, ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে তাণ্ডব চালানো এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। মাংখুটের আঘাতে ফিলিপাইনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জন। বেশিরভাগই মারা যায় ভূমিধসে।

সিত্রাং, বাংলাদেশ (২০২২)

সোমবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। ঝড়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হয়। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে আছড়ে পড়ে। এই ঝড়ে এ পর্যন্ত ৩৩জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।

তথ্যসূত্র: ক্লাইমেট প্রেডিকশন, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top