বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

অস্ট্রেলিয়ায় বাবা-ছেলের বন্দুক হামলা: নিহত ১৫, আহত ৪২

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২

ছবি: সংগৃহীত

কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন থাকা সত্ত্বেও গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সিডনির আইকনিক বন্ডি বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুক্কাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চালানো হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হয়েছেন।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জানায়, হামলাকারী ছিলেন বাবা ও ছেলে।

পুলিশ জানায়, নিহত বন্দুকধারীর নাম সাজিদ আকরাম (৫০)। পুলিশ গুলিতে তিনি নিহত হন। অপর হামলাকারী তার ছেলে নাভিদ আকরাম (২৪), যিনি আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ কমিশনার মাল ল্যানিয়ন বলেন, সাজিদের প্রায় ১০ বছর ধরে বৈধ বন্দুকের লাইসেন্স ছিল।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, নাভিদ অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া নাগরিক। সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, যা পরবর্তীতে পার্টনার ভিসা ও রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসায় রূপান্তরিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিবিএস নিউজের বরাতে জানা গেছে, বাবা-ছেলে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাজিদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর এক কর্মকর্তার মতে, প্রায় ছয় বছর আগে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে নাভিদকে অস্ট্রেলিয়ান গোয়েন্দারা নজরদারিতে রেখেছিল।

রোববার গ্রীষ্মের শেষ দিনে হাজারো মানুষ বন্ডি বিচে ভিড় করলে বিকেল ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে হামলা শুরু হয়। ‘হানুক্কাহ বাই দ্য সি’ অনুষ্ঠানে শত শত ইহুদি ধর্মাবলম্বী উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ১০ মিনিট ধরে গুলিবর্ষণ চলে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাঁতারের পোশাক পরা মানুষ গুলির শব্দ শুনে সৈকত ছেড়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন। অন্য ফুটেজে দেখা যায়, কালো শার্ট পরা দুই ব্যক্তি একটি ফুটব্রিজ থেকে গুলি চালাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আহমেদ আল আহমেদ নামের এক ফলের দোকান মালিক এক হামলাকারীকে ঝাপটে ধরে নিরস্ত্র করেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস তাকে ‘প্রকৃত নায়ক’ আখ্যা দেন। তার জন্য খোলা তহবিলে সোমবার সকাল পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ ডলার সংগ্রহ হয়েছে।

প্রিমিয়ার মিনস জানান, নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছর। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্বব্যাপী অর্থোডক্স ইহুদি আন্দোলন চাবাদ নিশ্চিত করেছে, নিহতদের একজন ছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক ও চাবাদ অফ বন্ডির সহকারী রাব্বি এলি স্লাঙ্গার।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন,

“এটি ছিল বিশুদ্ধ শয়তানি কাজ—একটি ইহুদিবিরোধী সন্ত্রাসী হামলা।”

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ বিশ্বনেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

১৯৯৬ সালে তাসমানিয়ার পোর্ট আর্থার হামলায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর এটিই অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ গণগুলির ঘটনা।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিরোধী হামলার মাত্রা বাড়ছিল, এই ঘটনা তার সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top